“স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে (ভারতকে) আমাদের বলতে হবে,” বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
Published : 15 Aug 2024, 11:46 PM
কোটা সংস্কার থেকে সরকারপতনের আন্দোলনের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে; এসব মামলায় বিচারের জন্য তাকে ভারত থেকে দেশে ফেরানোর চেষ্টাও করতে পারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের এক জিজ্ঞাসায় কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ‘অনুমাননির্ভর’ কিছু বলতে না চাইলেও শেখ হাসিনা যে অনেক মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেই প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে (ভারতকে) আমাদের বলতে হবে।
“এটি ভারত সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি। ভারত এ বিষয়টি জানে এবং আমি নিশ্চিত তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে।”
রয়টার্স লিখেছে, বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো জবাব দেয়নি।
গেল জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা আন্দোলন পরে রূপ নেয় ছাত্র-জনতার তুমুল গণআন্দোলনে। আন্দোলন-বিক্ষোভের ৩৬ দিনে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের বেশিরভাগই ছাত্র।
সবশেষ গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিন অবস্থা বেগতিক থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা।
সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত ১০ দিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে চারটি হত্যা মামলা এবং একটি অপহরণ-নির্যাতনের মামলা।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করা হয় তার দেশত্যাগের আট দিন পর। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে এক দোকান মালিকের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৩ অগাস্ট শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
পরদিন ১৪ অগাস্ট ২০১৫ সালের একটি ঘটনায় অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
একই দিন শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে মিরপুরে গুলিতে কলেজছাত্র নিহতের ঘটনায়।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন আগারগাঁওয়ে গুলিতে এক যুবক নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার ঢাকার হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলাতেও শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে আন্দোলনের সময় র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া গুলিতে এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগে বৃহস্পতিবার ঢাকার হাকিম আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার আসামি তালিকায় শেখ হাসিনাসহ মোট ১৬ জনের নাম রয়েছে।
এসব মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও আসামি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্তও শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ওই অভিযোগ তদন্তে বুধবার আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোয়ার হোসেন তামিম।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা ছাড়াও তার এক উপদেষ্টা ও দুজন মন্ত্রী ইতোমধ্যে দেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন। হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তবর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাতকারে এ প্রসঙ্গেও কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। নির্বাচনের বিষয়টি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্পষ্ট হতে পারে বলে জানান তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমার সব সহকর্মী (উপদেষ্টারা) এখন দেশের চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে খুব ব্যস্ত। আগামী সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকের মধ্যেই পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার হল ‘আমূল সংস্কার’। কারণ, আমাদের সিস্টেম সম্পূর্ণ দুর্নীতিগ্রস্ত, প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে। সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
“নির্বাচনের ঘোষণা হয়ে গেলে ‘আমাদের কাজ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে’। আমাদের কারোরই কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই।”
আরও পড়ুন-
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবার 'অপহরণ-নির্যাতনের' মামলা
ছাত্র হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
হেলিকপ্টার থেকে গুলি: আরেক হত্যা মামলায় আসামি হাসিনা
পুলিশের গুলিতে মৃত্যু: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেক হত্যা মামলা
মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা: কোটালীপাড়ায় দোকান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ