Published : 07 Sep 2024, 05:41 PM
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হরতাল-অবরোধের যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতারা পরিবহনে বোমা মেরে বিরোধী নেতাদের নামে মামলা দিতেন বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নতুন নেতারা দাবি করেছেন।
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মঙ্গলবার সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, “অধিকাংশ জেলা টার্মিনালগুলোতে শ্রমিক স্বার্থের পরিবর্তে বিরোধী দলের আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য শ্রমিকদের বাধ্য করেন ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি শাজাহান খান ও সম্পাদক ওসমান আলী।
“তাদের নির্দেশনা অমান্যকারীদের হয়রানি করা হত। বিরোধী দলের আন্দোলন হরতাল-অবরোধে পরিবহন শ্রমিকদের গাড়ি চালাতে বাধ্য করা হত। আবার যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগের ‘সন্ত্রাসীরা' চলমান গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে ড্রাইভার ও যাত্রীদের হতাহত করে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের নামে মামলা করেন।”
গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণের পর বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হয়েছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
গত ৪ অগাস্ট ধানমন্ডির জিগাতলায় এক কিশোরকে হত্যার মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার এক জরুরি সভা শেষে সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির খান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শ্রমিক ফেডারেশনের দায়িত্ব নেন।
এরপর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে শাজাহান খানসহ অন্য শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নতুন নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, “বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ৭০ লাখ শ্রমিকের প্রিয় সংগঠন। এ সংগঠন অরাজনৈতিকভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে সংগঠনের নিয়ম ভঙ্গ করে একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সংগঠন পরিচালনা হয়ে আসছিল।
“এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান, ওসমান আলী ও খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধের নামে নিজেরাই ক্ষেত্র তৈরি করে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতার নামে পরিবহন হতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। সরকারি ফান্ড হতেও সাহায্যের নামে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করেন তারা। আর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দুয়েকটি পরিবারকে আর্থিক সহযোগতা করে তা মিডিয়াতে প্রচার করেন।”
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে কোনো মালিক-শ্রমিক মুখ খুলতে পারেনি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলে শাজাহান খান ও ওসমান আলীরা আত্মগোপনে যায়।”
পরিবহন নেতা শাজাহান খান ও ওসমান জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন প্রতিহতেও নেতৃত্ব দেন বলে দাবি করেন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হুমায়ুন কবির।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাভার ও গাজীপুরে চলমান শ্রমিক আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, “এখনও দেশের শিল্প কারখানা, পরিবহনসহ বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নামে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ওসমান আলীর নেতৃত্বে আশুলিয়া, সাভার, ইপিজেড, গাজিপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা ভাঙচুর চালিয়ে যাচ্ছে।”
এসব অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা ওসমান আলীকে ফোন করলে তাদের নম্বর পাওয়া যায়।