ডিবির দেওয়া বিবরণ বিশ্বাসযোগ্য নয়, বলছে মানবাধিকার সংস্থা এমএসএফ।
Published : 20 Jun 2023, 12:59 AM
ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলাল উদ্দীনের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি।
এই মৃত্যু নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে; দাবি করেছে তদন্তের। তবে পুলিশের তেমন কোনো উদ্যোগ এখনও নেই।
আলালের বিরুদ্ধে আসলে কী অভিযোগ ছিল কিংবা কেন তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিতে হল, সে বিষয়েও মুখ কুলুপ এঁটেছেন ডিবি কর্মকর্তারা।
সোমবার ডিবির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা সবাই একই কথা বলেন, ‘হারুন স্যার’ ফিরলে তিনিই এই বিষয়ে কথা বলবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। তিনি মঙ্গলবার দেশে ফিরতে পারেন বলে তার সহকর্মীদের কাছ থেকে জানা গেছে।
ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ১০ দিন পর আলাল ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান।
তুরাগ থানার বাউনিয়া এলাকার একটি বাসার নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন আলাল। ওই বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে গত ৬ জুন সেখানকার ভাড়াটিয়া ফাতেমা আক্তারের (৩৩) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই মামলায় ওই নারীর চতুর্থ স্বামীকে গ্রেপ্তার করে তুরাগ থানা পুলিশ। এরপর তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে সেই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আলালকে গ্রেপ্তার দেখায় ডিএমপি-ডিবির উত্তর বিভাগ।
ঢাকায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির মৃত্যুর পর পুলিশের লুকোছাপা
গ্রেপ্তারের পর থেকে ‘অন্ধকারে’, হাসপাতালে মৃত্যুর পর জানলেন স্বজনরা
আলালকে কবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাও স্পষ্ট করছে না ডিবি। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আলালকে ৬ জুন সন্ধ্যায় ডেকে নিয়ে যায় ডিবির সদস্যরা।
পরিবার বলছে, আলালকে ধরে নেওয়ার পর থেকে তিনি কোথায় আছেন, কোনো খবরই তারা পাননি। শুক্রবার মৃত্যু হলে পুলিশের কাছ থেকে তাদের খবর দেওয়া হয়।
তখন পুলিশ শুধু বলেছিল, পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায় আলালের। তখন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
আলালের মৃত্যুর কারণ হিসেবে মৃত্যু সনদে বলা হয়েছে, ‘কার্ডিও রেসপারেটরি ফেইলিওর’, ‘কার্ডিওজিনিক শক’, ‘সাস্পেক্টেড পালমোনারি এমবোলিজম’।
এছাড়া সনদে তার ডান পায়ের গোড়ালিতে ‘সফট টিস্যু’ ইনজুরির কথা বলা হয়েছে।
ডিবি কর্মকর্তাদের দাবি, গ্রেপ্তারের সময় আলালউদ্দীনের পা ভাঙা ছিল। তবে স্বজনরা বলছেন, আলাল সুস্থই ছিলেন। তিনি হেঁটে হেঁটেই ডিবির ডাকে গিয়েছিলেন, লাশ পাওয়ার পর তারা দেখেন যে আলালের পা ভাঙা।
ফাতেমা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আলালের কী সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলছেন না।
তুরাগ থানার কর্মকর্তারা এই বিষয় নিয়ে কোনো কথাই বলতে চান না। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা ডিবিকে দেখিয়ে দেন।
এদিকে ডিবির উত্তরা বিভাগসহ ডিএমপিরি কর্মকর্তারাও কিছুই বলছেন না। সোমবারও ডিবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তারা বলেন, তাদের কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
সাধারণত হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অনেক কর্মকর্তা ঘুরে শেষে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) খন্দকার নুরুন্নবী সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কিন্তু আমাদের ভাষ্য দিয়েছি, আমাদের মিডিয়া (জনসংযোগ বিভাগ) থেকেও ভাষ্য দেওয়া হয়েছে।”
তিনিও বলেন, মঙ্গলবার অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ দেশে ফিরে এবিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
ডিবির বিবরণ বিশ্বাসযোগ্য নয়: এমএসএফ
হেফাজতে আলালের মৃত্যু নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র প্রশ্ন তোলার পরদিন সোমবার ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।
ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল।
তার পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, আলালের বিষয় নিয়ে ডিবি যা বলছে, তা ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’।
আলালের মৃত্যুর পর পুলিশের লুকোছাপার বিষয়টি তুলে এমএসএফ বলছে, এ ঘটনায় হাসপাতালে লাশের বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে দেখা গেছে এবং সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। শেরেবাংলা নগর থানা এবং তুরাগ থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সেখানে থাকলেও কোনো কথা বলেননি।
“অন্যদিকে ডিএমপি ডিবি উত্তরের যুগ্ম কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী আলালকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তুরাগ থানা এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বাড়ির কেয়ারটেকার আলাল জড়িত। তিনি আরও বলেন যে হত্যা করার সময় নারীটির সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আলাল পায়ে আঘাত পান।”
এমএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, “ডিবি কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০ দিন আটক রাখার পর ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
এই মৃত্যুর তদন্ত দাবি করে সংস্থাটি বলেছে, “হেফাজতে থাকা আটক ব্যক্তির মৃত্যু একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অমানবিক ঘটনা এবং তা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”