এই কর্মকর্তাদের মধ্যে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ও আরআরএফের পুলিশ সুপার মীজানুর রহমান বাহিনীর মধ্যে আলোচিত মুখ ছিলেন।
Published : 22 Sep 2024, 06:54 PM
আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মধ্যে ছাত্র-জনতার ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের মুখে পুলিশ বাহিনীতে শীর্ষ পদ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে চাকরিচ্যুতি ও রদবদলের ধারায় এবার সাত কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
সাতজনের মধ্যে একজন অতিরিক্ত আইজি, দুজন ডিআইজি এবং একজন সহকারী কমিশনার রয়েছেন। বাকিরা পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পৃথক ছয়টি প্রজ্ঞাপনে তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর তথ্য অবহিত করা হয়েছে।
এই কর্মকর্তাদের মধ্যে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ও আরআরএফের পুলিশ সুপার মীজানুর রহমান বাহিনীর মধ্যে আলোচিত মুখ ছিলেন।
সবশেষ রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্তে আইজি হিসেবে কর্মরত দেবদাস এর আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
মীজানুর রহমানের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়। পুলিশের পদোন্নতী প্রক্রিয়া অনুযায়ী এসপি হলেও তিনি নিজেকে ডিআইজি হিসেবে দাবি করতেন, শুধু তাই নয়; পরতেন র্যাঙ্ক ব্যাজও।
সব প্রজ্ঞাপনেই বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থে চাকরি থেকে তাদের অবসর দেওয়া হয়েছে।
এই ধারা বলে সরকার চাইলে কারণ দর্শানো ছাড়াই প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারে। শুধু তাই নয়, চাকরি হারানো কেউ-ই কোনো আপিলও করতে পারেন না।
৪৫ ধারা অনুযায়ী, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হয়। রোববার সাত কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন রয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়েছে, “চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হইবার পর সরকার যে কোনো সময় পেনশনে পাঠাতে পারবে। তবে এ সময় সকল সুযোগ-সুবিধা বা পূর্ণ পেনশনাদি প্রাপ্য হইবেন।”
রোববার অবসরে পাঠানো কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পাঞ্চল পুলিশের ডিআইজি (সুপার নিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এ কে এম হাফিজ আক্তার এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের টেলিকমের ডিআইজি (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বশির আহম্মদ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার শামীম অর রশীদ তালুকদার, এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম এবং ডিএমপির সহকারী পুলিশ সুপার মো. দাদন ফকির।
এর আগে গত ২৭ অগাস্ট চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সদ্য সাবেক কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ও খুলনা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হককে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
তার আগে ২২ অগাস্ট বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া, শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান (অতিরিক্ত আইজি) মো. মাহাবুবর রহমান এবং পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র।
২১ অগাস্ট পুলিশের সদরের অতিরিক্ত আইজি আতিকুল ইসলাম, সংখ্যাতিরিক্ত অতিরিক্ত আইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আনোয়ার হোসেন এবং ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি পদমর্যাদার) মো. আসাদুজ্জামানকে অবসরে পাঠানো হয়।
আর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর গত ১৩ আগস্ট পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা এসবির অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলাম ও ডিএমপির সদ্য সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানকে অবসরে পাঠানো হয়।
একই দিনে অবসরে পাঠানো হয় রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিআইজি পদমর্যাদার) মো. মনিরুজ্জামান এবং পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেনকে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে ৫ অগাস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। ওই সরকার আমলে আইজিপি ছিলেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। সরকার পতনের পরদিন ৬ অগাস্ট চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হয় মামুনের।
সরকার পতনের পর সেনাহেফাজতে ছিলেন চৌধুরী মামুন। সেখানে থাকা অবস্থায় তার নামে মামলা হওয়ায় ৪ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছায় তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।