“ট্রেন চালাতে যে খরচ হচ্ছিল, তা উঠে আসছিল না”, বলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক।
Published : 03 Nov 2024, 10:59 PM
ঢাকার বাজারে কৃষিপণ্যের পরিবহন খরচ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে চালু হওয়ার ১০ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে গেল ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’।
রেলওয়ে বলছে, ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে এই ট্রেনের বিষয়ে সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে রেলের লোকসান হওয়ায় সেবাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ট্রেন চালিয়ে রেলের লোকসান হচ্ছিল। কাঙ্ক্ষিত পণ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণে তারা চালাতে পারছেন না।
“দ্রব্যমূল্যে অনেক বেড়ে যাওয়ায় আমরা চাচ্ছিলাম জাতীয় পর্যায়ে কিছুটা অবদান রাখতে। এ কারণেই উপদেষ্টা মহোদয়ের পরামর্শক্রমে এই ট্রেনটি চালু করা হয়েছিল। কিছু জায়গা থেকে আমরা পণ্য পাচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা আমাদের ট্রেনের যে ধারণক্ষমতা তার চেয়ে অনেক কম।
“ফলে ওই ট্রেন চালাতে যে খরচ হচ্ছিল, তাও উঠে আসছিল না। আরেকটা সমস্যা হচ্ছিল এখানে, কৃষকরা চাচ্ছেন যে বিকেলে তারা স্থানীয় হাট থেকে মাল তুলে দেবে। মাঝরাতে তা ঢাকায় পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু ওইসব লাইনে আমাদের যাত্রীবাহী আরও অনেক ট্রেন চলাচল করে। ফলে পদ্ধতিগত কারণেই এত দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব না। এ কারণে বন্ধ করে দিয়েছি।”
গত ৩১ অক্টোবর পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন থেকে তেজগাঁও এবং শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ-তেজগাঁও রুটের কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। খুলনার ট্রেনটি বন্ধ হয়ে শনিবার।
গত ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-পরিচালক (টিটি) মো. আনসার আলীর স্বাক্ষরে পাঠানো এক চিঠিতে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালানোর বিষয়ে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পরিবহন ব্যয় কমাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাগেজ ভ্যান ব্যবহার করে খুলনা থেকে তেজগাঁও, পঞ্চগড় থেকে তেজগাঁও এবং রহনপুর-তেজগাঁও-খুলনা রুটে লাগেজ ভ্যান চালানোর প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। ২২ অক্টোবর থেকে ওই ট্রেন চলাচল শুরু হবে।”
প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে খুলনা থেকে, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় পঞ্চগড় থেকে, শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় ১৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেন ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পথে বিভিন্ন স্টেশন থেকেও পণ্য তোলার কথা বলা হয়। সবটি ট্রেন তেজগাঁও স্টেশনে থামার ঘোষণা ছিল।
এছাড়াও সব আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান যুক্ত করার ঘোষণা ছিল।
প্রতি কেজি কৃষিপণ্য খুলনা থেকে ঢাকায় ১ টাকা ৪৭ পয়সা, যশোর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩৫ পয়সা, চুয়াডাঙ্গার থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩০ পয়সা, ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা ১ টাকা ৮ পয়সা, পার্বতীপুর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩৪ পয়সা, জয়পুরহাট থেকে ঢাকায় ১ টাকা ৩০ পয়সা, সান্তাহার থেকে ঢাকা ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজশাহী থেকে ঢাকা ১ টাকা ১৮ পয়সা, রহনপুর থেকে ঢাকা ১ টাকা ৩০ পয়সা ভাড়া ঠিক করা হয়।
এই স্পেশাল ট্রেনে সাধারণ লাগেজ ভ্যানের পাশাপাশি রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানের ব্যবস্থা রাখা হয়, যার মাধ্যমে মাছ-মাংসসহ পচনশীল পণ্য পরিবহন করার সুযোগ ছিল
ব্যাপক প্রচার প্রচারণার পরেও প্রথম দিন খুলনা থেকে কেবল ৬৪০ কেজি পণ্য নিয়ে ট্রেন ছাড়ে। পথে যশোরে ১০ মিনিটের যাত্রা বিরতি থাকলেও কোনো পণ্য ওঠেনি।
পরে পঞ্চগড় থেকেও ট্রেন ছাড়ে ফাঁকা, পথে দিনাজপুর থেকেও কোনো পণ্য ওঠেনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছাড়া ট্রেনেও উঠেনি কোনো পণ্য। সেই ট্রেনে রাজশাহী থেকে মুরগির কিছু ফাঁকা খাঁচা উঠে।
আরও পড়ুন