ঢাকার প্রায় সব বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক সেমিনারে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরলেন সরকারের মন্ত্রীরা।
Published : 11 Dec 2022, 09:22 PM
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে বিদেশি রাষ্ট্রের চাপের কাছে শেখ হাসিনা সরকার নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রোববার বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সেমিনারের মূল প্রবন্ধে তার এ মন্তব্য আসে।
‘মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওই সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতসহ ঢাকার প্রায় সব বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন।
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ১৫ দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ বিবৃতি নজরে আসার কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম বলেন, “গণতন্ত্রের যাত্রায় সাংবিধানিক পথ ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে জাতিকে বিচ্যুত করে এমন কোনো ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাইরের চাপের কাছে নত হবেন না আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা।
“তার সরকারের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে এ দেশের জনগণ; এবং জনগণই নির্ধারণ করবে কারা দেশ শাসন করবে। বাইরের কোনো শক্তি কিংবা অভ্যন্তরীণ কোনো ষড়যন্ত্র সেটা নির্ধারণ করবে না।”
এই মাটিতে গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষায় সংগ্রাম থেকে সরকার ‘বিরত হবে না’ বলেও প্রত্যয় জানান প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চেয়ে গত ৬ ডিসেম্বর বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৪ দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একই দিনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকদের ঢাকায় জনসমাগম এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেয়।
এর মধ্যে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নয়া পল্টনে বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে তদন্ত দাবি করেন। এ বিষয়গুলোকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সেমিনারে বিদেশি মিশনগুলোর উদ্দেশে বলেন, “ঢাকার সংশ্লিষ্ট বিদেশি মিশনগুলোকে কূটনৈতিক রীতি ও শিষ্টাচার মেনে চলার আহ্বান জানাই, যেমনটা তারা তাদের দেশের বিদেশি মিশনগুলোর কাছে প্রত্যাশা করে।
“বাংলাদেশ সরকার বিদেশি অতিথিদের প্রতি ধৈর্য্যশীল ও আন্তরিক এবং সরকার সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তবে আমাদেরও কিছু শেষ সীমা রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেন, নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে ‘নিজস্ব অবস্থানে অটল থাকবে’ বাংলাদেশ।
সেমিনারের সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অবাধ, নিরপক্ষে, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক এবং সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার প্রতিশ্রুতিশীল।
“নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণে স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। তাতে মানুষ ব্যাপক উদ্দীপনা নিয়ে অংশ নিয়েছে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সরকার পুরোপুরি জনগণের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। কোনো ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপ কিংবা অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের সেই পথ থেকে আমাদেরকে বিচ্যুত করতে পারবে না।
“সব ধরনের মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষা করা আমাদের সাংবিধানিক ও আদর্শিক বাধ্যবাধকতা। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। বহুপক্ষীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা সে কাজ করে যাব।”
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বলেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এর মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হারিয়েছে জাতি। এরপর নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েছে দেশ।
“আমরা এ সমস্ত বিষয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি এবং সেই শিক্ষার উপর বাংলাদেশ তার মানবাধিকারের ভিত্তি তৈরি করেছে। তখন থেকে বাংলাদেশ মানবাধিকারের ভালো প্রয়োগগুলো অনুসরণ করেছে এবং মানবিক মর্যাদা বিবেচনায় নিয়ে আইন প্রণয়ন করেছে।”
তিনি বলেন, “আমরা জনগণের সরকার। সুতরাং সরকারের পদ্ধতি হচ্ছে, আমরা প্রথমে শুনি, অবস্থা বোঝার চেষ্টা করি এবং সমাধানে পদক্ষেপ নিই। এটা জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা, কিন্তু এটাকে আমাদের দুর্বলতা হিসাবে যেন ভুল বোঝা না হয়।”
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে মানুষের ইচ্ছার ওপরই সরকার নির্ভর করছে মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, “অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশের পথচলা নির্ধারিত হবে। আর এই পথেই মানবাধিকারের সুরক্ষা দেব আমরা।”
অন্যদের মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান, বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, জেনিভায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আবদুল হান্নান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।