“আমাদের শাসনতন্ত্রে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নাই,” বলেন তিনি।
Published : 08 Oct 2023, 09:03 PM
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও ভোটকে সংঘাতমুক্ত করার কাজটি এককভাবে ‘সরকারের হাতে নেই’ বলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সব দলের ও মতের আন্তরিকতা ও ইচ্ছা থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দেন তিনি।
রোববার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশনের প্রতিনিধিরা।
নির্বাচনের বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগের বিষয় তাদের কাছে তুলে ধরার পর ব্রিফিংয়ে আসেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বলেছি, তোমাদেরও আমরা সাহায্য চাইব যে, আমাদের দেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার জন্য। তবে, নন-ভায়োলেন্ট আমরা বলতে পারলাম না, কারণ নন-ভায়োলেন্ট হবে সর্বদলের ঐক্যমতে। একান্ত আন্তরিকতা, ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।”
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখতে এবং ভোটের বিষয়ে ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পর্যালোচনা’ চালানোর জন্য শনিবার ঢাকায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যালোচনা মিশন (পিইএম)।
ছয় সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ এই মিশন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে।
যৌথভাবে এই মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাবেক অ্যাসিট্যান্ট সেক্রেটারি কার্ল এফ ইন্ডাফার্থ এবং ইউএসএআইডি’র সাবেক উপ-প্রশাসক বনি গ্লিক।
সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নাগরিক সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি মিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে এই প্রতিনিধিদল।
নিজেদের কর্মকাণ্ড শুরুর প্রথম দিন বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ‘ফিরিস্তি’ বৈঠকে তুলে ধরার কথা পরে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
‘বাংলাদেশের মতো দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত হয়ে থাকে’- এমন কথা বৈঠকে তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, “তবে, ইলেকশন হল হলিডের মতো, বন্ধ থাকে, গাড়িঘোড়া থাকে না, তাতে মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে বের হয়। এসবই আমরা বলেছি।”
সংঘাতের ঠেকানোর উদ্যোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চাই অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন, আমরা চাই সংঘাতমুক্ত।
“কিন্তু সংঘাতটা আমরা গ্যারান্টি দিতে পারব না। কারণ, সংঘাতমুক্ত করতে হলে সকল দলের এবং মতের আন্তরিকতা ও ইচ্ছা না থাকলে ওইটা সম্ভব না।”
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কোনো আলাপ হয়নি। এটা কোনো প্রশ্নই না।
“কারণ, দুনিয়াতে যেভাবে নির্বাচন হয়…আমি বলেছি আমরা শাসনতান্ত্রিক নিয়মে আমরা করব। আমাদের শাসনতন্ত্রে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নাই।”
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়নি দাবি করেন মোমেন বলেন, “অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমাদের ধারণায়, জনগণ যদি অংশগ্রহণ করে, ভোট দেয়, তাহলে এটা অংশগ্রহণমূলক। কে আসল না আসল সেটা অপ্রাসঙ্গিক।
“কোন লোক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল কি করল না, এটা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। যথেষ্ট সংখ্যক লোক যদি ভোট দেয়, তাহলে এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।”
বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি বলেছি যে, কোনো কোনো দল ২০১৪ সালে নির্বাচন বয়কট করে জ্বালাওপোড়াওয়ের আন্দোলন করে বহু লোককে মেরে ফেলে।
“আমরা চাই সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু আমি কাউকে বলি নাই, আপনারা ওদের জোর করে আনবেন।”