“তিস্তায় একটা বৃহৎ প্রকল্প নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়,” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
Published : 09 May 2024, 10:18 PM
ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার সঙ্গে ভিসা জটিলতা, ‘কানেক্টিভিটি’, সীমান্ত হত্যা ও তিস্তায় নতুন প্রকল্পের ব্যাপারে আলোচনার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিনয় মোহনের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী নিয়ে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের ১৬-১৭ লাখ মানুষের জন্য ভিসা ইস্যু করে ভারত। ভারত সর্বোচ্চ ভিসা ইস্যু করে বাংলাদেশে। কিন্তু অনেক সময় ভিসা পেতে অপেক্ষা করতে হয়। সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
“ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বাংলাদেশে ভারতীয় মিশনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তারা আরও লোকবল নিয়োগ করছেন। আমি অনলাইনে আবেদনের কথা বলেছি, যেন সহজে মানুষ ভিসা পায়। তারা বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে দেখছেন।”
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।
বৈঠকে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা চাওয়ার কথাও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা ফিজিক্যাল কানেক্টিভিটি নিয়ে আলোচনা করেছি। সেটা অনেক দূর এগিয়েছে। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়া এবং এ দুই দেশ থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।
“ইতোমধ্যে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে। ট্যারিফ নিয়েও আলোচনা অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছে। সেটি আমাদের ক্রয় কমিটিতে যাবে। সেটি হলে ভারতের ওপর দিয়ে আমরা নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারব।”
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গও তোলেন হাছান মাহমুদ।
সীমান্তে ‘প্রাণঘাতী নয়’ এমন অস্ত্র ব্যবহারে ওপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, তারা তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। এটি নিয়ে দুই দেশের সরকারি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।”
বাংলাদেশের উজানে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তায় আমরা একটা বৃহৎ প্রকল্প নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। আমি বলেছি, তিস্তায় যে প্রকল্পটি হবে, সেটা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। আমাদের প্রয়োজন যেন পূরণ হয়।”
সফরসূচি ঠিক না হলেও ভারতের চলমান নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন হলে দেশটিতে সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাছান মাহমুদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর অনেক আগে থেকে ভারত সফরের কথা রয়েছে। ভারতে যেহেতু নির্বাচন, সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কখন সফর হবে, সেটি নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
“ভারতে নির্বাচনের পর সরকার গঠন হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সফর কখন হবে, সেটা ঠিক হবে।”
প্রথম ধাপে দেশের ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে বুধবার। বিএনপির বর্জনের এ ভোটে বেশকিছু কেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও গুলির খবর পাওয়া গেছে। তবে এ উপজেলা নির্বাচন প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় ‘শান্তিপূর্ণ হয়েছে’ বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। বিএনপির নিষেধ সত্ত্বেও তাদের নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।”
এদিন দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওই আলোচনা সভা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন জাতি ও মানবতার জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তার জীবন ও কর্ম থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর জামাতা, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বামী হয়েও সে পরিচয় দিয়ে কিছু করেননি। সেবার ব্রত নিয়ে গবেষণা করেছেন। আজকের পরমাণু শক্তি কমিশন তারই প্রেরণার ফসল।”
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য লায়ন মশিউর আহমদ, দলের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির সভায় উপস্থিত ছিলেন।