হাসিনা সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে।
Published : 06 Dec 2024, 11:39 PM
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সরকারে পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে অন্তত ১৩টি ‘ভুয়া খবর’ প্রচারের তথ্য দিয়েছে রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটির এ প্রতিবেদনে ১২ অগাস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব ভুয়া খবর ও গুজব প্রচারের তথ্য উঠে এসেছে। এগুলো ভারতের অন্তত ৪৯টি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
শুক্রবার নিজেদের ওয়েবসাইটে রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ ‘ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের পর প্রতিবেশী দুই দেশে সনাতনী ধর্মালম্বীদের বিক্ষোভের মধ্যে ভারতের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ক সংবাদ প্রচার বেড়ে যায়।
এসব সংবাদে ব্যাপকহারে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার ও মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসহ বিভিন্ন সংগঠনগুলো।
শেখ হাসিনা সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে।
শুক্রবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ‘গুজব ও অপপ্রচারের অভিযোগ’ তুলে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
এমন প্রেক্ষাপটে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশের প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে যেসব ভুয়া খবর প্রচার করা হয়েছে সেটির তালিকা প্রকাশ হল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সীমানা ছাড়িয়ে ভারতেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে একের পর এক গুজব।
তুমুল গণ আন্দোলনে রেশে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
প্রতিবেদনে রিউমর স্ক্যানার বলেছে, “অনুসন্ধানে দেখা গেছে-সর্বাধিক পাঁচটি ভুয়া খবর প্রচার করেছে রিপাবলিক বাংলা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ ও লাইভ মিন্ট, যেগুলো অন্তত তিনটি করে গুজব প্রচার করেছে। এছাড়া রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক অন্তত দুটি করে গুজব প্রকাশ করেছে।”
বাকি ৪১টি সংবাদমাধ্যম অন্তত একটি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রতিবেদনে তালিকায় থাকা ভুয়া খবর ও গুজবগুলো হল- ”শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলা চিঠি, মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি, ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি, পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে প্রচার।”
অন্য খবরের মধ্যে রয়েছে, ”বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়ার গুজব, বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিতে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি এবং বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা জারির বিভ্রান্তিকর খবর।”
এসব বিষয়ের মূল খবর বিশ্লেষণ ও যাচাই বাছাই করে রিউমার স্ক্যানার খবরগুলো ভুয়া ও গুজব বলে তুলে ধরেছে।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে এগুলোর প্রচার শুরুর তথ্য তুলে ধরেছে প্রতিষ্ঠানটি। ’শেখ হাসিনার খোলা চিঠির’ খবর দিয়ে যা শুরু হয়।
ভুয়া খবরের পাশাপাশি এক ঘটনার ভিডিওকে অন্য ঘটনার ভিডিও হিসেবেও প্রচার করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। আর সবশেষ ‘ভুয়া খবর’ প্রচার করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা নিয়ে।