“উপদেষ্টা পরিষদের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে” এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
Published : 13 Aug 2024, 08:57 PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দিন ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “উপদেষ্টা পরিষদের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঘোষিত ১৫ অগাস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের বিষয়টি অদ্যকার উপদেষ্টা মণ্ডলীর বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে।”
এর আগে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় এক বৈঠকে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে ১৫ অগাস্ট নিয়েও কথা হয়।
তার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের এক মতবিনিময় সভায় ১৫ অগাস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন না করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়।
হেফাজতে ইসলামও ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিলের দাবি জানায়। পাশাপাশি ১৫ অগাস্টের মধ্যে সারাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার আলটিমেটাম দেয় সংগঠনটি।
স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে।
তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি।
বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার শুরু হয়। সেই সঙ্গে ১৫ অগাস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করে।
এরপর থেকে আবার আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়েই দিনটি পালিত হয়ে আসছিল। ২০০৮ সালে হাই কোর্ট এক রায়ে ১৫ অগাস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। এরপর পুনরায় ক্ষমতায় ফেরা আওয়ামী লীগ ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে।
গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ পুরো অগাস্ট মাস জুড়ে শোক পালনে নানা কর্মসূচির আয়োজন করত। এবারও সেরকম ঘোষণা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান।
এরপর দেশের আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।
এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে দেশ ছাড়েন। তৃনমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে অগাস্ট জুড়ে ঘোষিত শোকের মাসের কর্মসূচিগুলো আর হয়নি।
দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। সেজন্য পোস্টার বানিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. জাবের হোসেন লিখন একটি ফেইসবুক পোস্টে স্টিকার শেয়ার করেছেন, সেখানে লেখা, ‘১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস। মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২। দলে দলে যোগ দিন সফল করুন।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে সারাদেশে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালিত হত। ঢাকার পাশাপাশি বড় আয়োজন থাকত গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়, সেখানেই বঙ্গবন্ধুর সমাধি।
টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগ এবারও জাতীয় শোক দিবস পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ১৫ অগাস্ট সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মোনাজাত, আলোচনা সভা এবং দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণেন মত কর্মসূচি রয়েছে এর মধ্যে।
গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহবুদ্দির আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে নেতাকর্মীদের লংমার্চ করে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।”