গোসসা নিবারণী পার্কের কী হবে?

আগের ঠিকাদার বাতিল; নতুন করে কবে কাজ শুরু হবে, কেউ জানে না।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2023, 05:58 AM
Updated : 7 Feb 2023, 05:58 AM

ব্যক্তি জীবনের গোসসা নিবারণের পথ বাৎলে দিতে ২০১৮ সালে নাগরিকদের সোয়া এক বছর ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটির তরফ থেকে; সেই অপেক্ষা সহসাই ফুরাচ্ছে না।

ওই বছরের শুরুতে ওসমানী উদ্যানে ‘গোসসা নিবারণী পার্ক’ এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করে তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, “কর্মস্থলে ও পরিবারে প্রতিনিয়ত মানুষ গোসসা করে, রাগ হয়। এই পার্কটি এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে এখনে কেউ মন খারাপ নিয়ে এলে পরিবেশের সান্নিধ্যে তার মন ভালো হয়ে যাবে, উৎফুল্ল মনে নতুন উদ্যমে সে আবার কাজে ফিরে যেতে পারবে।”

এ পার্কের কাজ ১২ থেকে ১৬ মাসের মধ্যে শেষ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

২০১৮ সালের শেষে নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “কাজটা খুবই ধীর গতিতে চলছিল। এখন যেন দ্রুততার সঙ্গে হয়, এ জন্য আমি দুবার পরিদর্শন করেছি।”

নানা কথনের মধ্যে চার বছর কাটলেও সেই কাজ আর শেষ হয়নি। দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদার কোম্পানিকে বিদায় নিতে হচ্ছে জরিমানা দিয়ে।

গত দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পার্কটির নির্মাণ কাজ। সেখানে নতুন করে কবে কাজ শুরু হবে, শেষই বা কবে হবে - তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা।

রোববার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা গেল, দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় উদ্যানের বসার জায়গা, হাঁটার পথ, লেকের সিঁড়ি, ব্যায়ামাগার অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু কিছু স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী।

চারদিকে টিন দিয়ে ঘিরে রাখায় সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে না পারলেও মাদকসেবীদের আনাগোনা লেগেই থাকে বলে আশপাশের লোকজন জানালেন।

উত্তরপাশের বন্ধ ফটকের সামনে ঝুলছে সাইনবোর্ড, ‘সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ’। পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বেও কাউকে দেখা গেল না।

কাউসার নামের একজন হকার জানালেন, দিনের বেলায় হকার, উদ্বাস্তু, পথশিশুসহ সব ধরনের মানুষ এখানে আড্ডা দেয়।

“আমরা এখানে আইসা বসি, অনেকে নেশা টেশা করে।”

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঠিকাদার কোম্পানিকে আমরা অনেক সুযোগ দিয়েছি। কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী তারা কাজ শেষ করতে পারেনি। এখন কার্যাদেশটি আমরা বাতিল করেছি।

“কী পরিমাণ কাজ শেষ হয়েছে বা তারা কত টাকা পাওনা রয়েছেন- সেসব বিষয়ে হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লেগেছে। আইনগত ধারা অনুসরণ করে কার্যাদেশ বাতিল করে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। তাদেরকে এক কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।”

কবে নাগাদ পার্কের কাজ শেষ হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন দরপত্র আহ্বান করে অবশিষ্ট কাজ শেষ করার। এটা আমরা প্রায়রোটি প্রজেক্ট হিসেবেই দেখছি।”

জরিমানা গোনা ঠিকাদার কোম্পানি দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী ফজলুল করীম চৌধুরী স্বপনের বক্তব্য জানতে কল করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ পার্কে থাকবে স্বাধীনতা চত্বর, বসার জোন, জিম, শিশু কর্নার, এলইডি টিভি, ওয়াইফাই জোন, স্ট্রিট লাইট ও ওয়াকওয়ে।

এ ছাড়া টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড বোর্ড, ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস সুবিধা পাবেন খেলাধুলায় আগ্রহীরা। পার্কে ফুড কর্নার, নগর জাদুঘর, পাঠাগার, কার পার্কিং, এটিএম বুথ, ওষুধের দোকান, সিসি ক্যামেরাও যুক্ত করা হবে।

প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক খায়রুল বাকের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের কার্যাদেশটি বাতিল হয়েছে। দুমাস আগে আমি এই প্রকল্পের পিডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। মোট তিনটি প্যাকেজে ৩০ কোটি করে ৯০ কোটি টাকার ব্যয় ধরা হয়েছিল।”

Also Read: পার্কের নাম থেকে রাগ বাদ পড়লেও ‘রাগ কমবে’

Also Read: ঢাকাবাসীর ‘রাগ নিবারণে’ পার্ক

কবে নাগাদ নতুন করে কাজ শুরু হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে খায়রুল বলেন, “অসম্পূর্ণ কাজ নতুন করে শুরু করার জন্য আমরা ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাব অনুমোদনের পর নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। তারপরে কাজ শুরু হবে।”

২৯ একর জায়গাজুড়ে এ উদ্যানটির সংস্কার কাজে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। পরে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৯০ কোটি টাকা করা হয়। এখন পর্যন্ত এ পার্কের আধুনিকায়ন কাজের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে কর্মকর্তারা।