“সরকারে বসে, সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আপনারা দল গঠন করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না, জনগণ মেনে নেবে না,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
Published : 19 Feb 2025, 06:42 PM
অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে থেকে ‘সুযোগ-সুবিধা নিয়ে’ নতুন দল গঠনের ‘কৌশল’ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, তারা চেষ্টা করছেন অতিদ্রুত কিছু কাজ শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার। কিন্তু এর মধ্যেই কতগুলো সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। সেই সন্দেহটা হচ্ছে যে, আদৌও নির্বাচনের ব্যাপারে এরা আন্তরিক কিনা।
“গতকাল (মঙ্গলবার) আপনারা পত্রিকায় দেখেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) যিনি আছেন, তিনি বলেছেন- ‘ফ্যাসিস্টদের লোকেরা যদি কেউ মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে তারা অংশ নিতে পারবে’। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা এখন নিজেদের স্বার্থে ওই ফ্যাসিস্টদের জায়গা দিতে চায়…।
“স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা গতকালকে যে কথাটা বলেছেন, ইট ইজ ডেঞ্জারাস। তার মানে কি আমরা এটা মনে করব যে, তারা সরকারে থেকে তাদের দল গোছানোর জন্য তারা বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছেন। সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেব না, এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টাসহ ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি দল গঠনের আলোচনার মধ্যে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জুলাই আন্দোলনের মূল নেতাদের সম্মুখ সারিতে রেখে এই দল গঠনের আলোচনা চলছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও দলের সামনের সারির দিকে আসতে পারেন বলে আলোচনা হচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম সোমবার বলেন, নতুন দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চলতি সপ্তাহেই জানাবেন। আর দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সরকারের দায়িত্ব থেকেও ইস্তফা দেবেন।
বিষয়টি নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বুধবার দুপুরে ছাত্রদলের এক আলোচনা সভায় কথা বলেন ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমরা খুব স্পষ্ট করেই বলছি, অবশ্যই নতুন যখন রাজনৈতিক দল গঠন হবে, তাকে আমরা স্বাগত জানাব। ছাত্র সংগঠন ইতোমধ্যে করেছেন আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। যখন দল তৈরি করবেন আমরা স্বাগত জানাব।
“তার মানে এই নয় যে, আপনারা সরকারে বসে, সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আপনারা দল গঠন করবেন…সেটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না, জনগণ মেনে নেবে না।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি অন্তবর্তীকালীন সরকার ও সরকার প্রধানকে বলতে চাই, আপনি অবিলম্বে এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন। তা না হলে জনগণের যে আস্থা আপনাদের ওপরে আছে, সেই আস্থাও থাকবে না।”
ফখরুল বলেন, “আমি যখন প্রথম বলেছিলাম, যদি এই অন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা হারায় তাহলে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। কেন বলেছিলাম তা এখন প্রমাণ হচ্ছে। তখন একজন (উপদেষ্টা) বলেছিলেন, আমি একটি এক-এগারোর দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা এক-এগারোর ভুক্তভোগী, এক-এগারো যারা সৃষ্টি করেছিল তারা টিকতে পারেনি জনগণের কাছে।
“আবারও হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, যদি আবার কেউ সেই এক-এগারোর কথা চিন্তা করেন, গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে আবার এক দলীয় শাসন ফ্যাসিস্ট সরকারের দিকে যেতে চান, তাহলে কখনোই জনগণ তা মেনে নেবে না।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শিক্ষাখাত সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা এমবিবিএস পাস করে বিদেশে সরাসরি ভর্তি হতে পারে না। কারণ ওরা (বিদেশি প্রতিষ্ঠান) মনে করে যে, এখানে (বাংলাদেশ) যে এমবিবিএস পড়াশুনা হয়, সেটা সঠিক হয় না। আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশে মাস্টার্স পাস করে উচ্চ শিক্ষায় বিদেশে গেলে তাদের আবার ল্যাংগুয়েজসহ বিভিন্ন পরীক্ষা দিতে হয়…যেটা আগে ছিল না। কারণ শিক্ষার ব্যবস্থাটা আগে এমন ছিল যে, একজন শিক্ষার্থী সর্ব বিষয়ে পারদর্শী হতে পারে তার ব্যবস্থা ছিল।”
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ছাত্র বিষয়ক রকিবুল ইসলাম বকুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, উত্তরের মোস্তফা জামান, ছাত্রদলের পূর্বের সভাপতি সোহাগ ভুঁইয়া, উত্তরের সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণের সভাপতি শামীম মাহমুদ ও পশ্চিমের সভাপতি রবির খান বক্তব্য দেন।