লালঠোঁট পাখি

নিজাম বিশ্বাসনিজাম বিশ্বাস
Published : 24 May 2023, 05:40 AM
Updated : 24 May 2023, 05:40 AM

একটি পাখির ছবি আঁকছি গোপনে

টেকচার বসালাম আকাশের নীলে

গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ আর রকেটের ধোঁয়া,

প্রথমেই আঁকলাম পাখির চোখের

তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, তার চোখে আমার চোখের

চাহুনি দিলাম এঁকে, শৈশবের মতো

সকালের রোদে তার চোখ ঝলোমল

আঁকলাম জোড় ঠোঁট-- লালঠোঁট পাখি,

ধীরে ধীরে তার গায়ে পালক পরাচ্ছি

বহুরঙা পালকের পাখি-- সাদা, কালো

হলুদ, সবুজ, নীল, বাদামী, গোলাপী;

পালকে পালক গাঁথা সহমর্মিতায়

পাখির বুকের কোমলতা আঁকলাম

গ্রীবাদেশ আঁকলাম, তার গ্রীবা বেয়ে

ধূসর জলপ্রপাত নেমেছে নদীতে,

একগুচ্ছ পালকের পুচ্ছ বসালাম

পাখির কন্ঠের জন্য আঁকলাম গান

এখন পাখির ডানা আঁকছি-- পাখনা,

একটি একটি করে পালক গাঁথছি

অজস্র রঙিন পালকের ডানা নিয়ে

পাখিটি বসার ঘরে থাকবে, সুন্দর!

পালকের ভাঁজে সূক্ষ্ণ তুলির আঁচড়,

পালক জড়িয়ে আছে পালকের বুকে

শিহরণ জাগানিয়া আলিঙ্গনে যেন

বিকেল ঘনিয়ে এল, ক্যানভাস ছেড়ে

জলপিপাসায় উঠে আসি বারান্দায়,

ভাবছি পাখির নাম দিব কি, পাখিটা!

ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা ঘনিয়েছে প্রায়

স্টুডিওতে এসে দেখি, পাখি উড়ে গেছে

ক্যানভাস ছেড়ে আহা, উড়ে গেছে পাখি

পাখি উড়ে গেছে তার সব রং নিয়ে,

মেঝেতে ছড়িয়ে আছে শুধু তার গান

এখনও যে পাখির পা আঁকা আছে বাকি

উড়ছে উড়ছে শুধু উড়ছে আকাশে

ডিগবাজি খাচ্ছে পাখি বাতাসে বাতাসে

গোত্তা খেয়ে পড়ে যাচ্ছে মাটিতে, আবার

মাটি স্পর্শ না করে সে উড়ে যাচ্ছে দূরে,

উঠে যাচ্ছে মেঘ ছিড়ে দূর মহাশূন্যে

পৃথিবীর কোথাও সে পায় না আবাস--

পা ছাড়া পাখির দিকে অসংখ্য ট্রিগার

সে মেঘ ধরেছে ঠোঁটে, লালঠোঁট পাখি

মেঘ ঝরে গেছে, রোদ ধরল সে চোখে

অমানিশা নেমে গেছে, প্রকাণ্ড বৃক্ষের

শরীরে কাঁপন ধরে দখিনা বাতাসে--

অনেক ওড়ার পর চায় অবসর

পা ছাড়া পাখির সাধ্য নাই বসিবার

পাখি গান গায়, ফুল ঝরা শব্দ হয়

পাখি গান গায়, পাতা ছেড়া শব্দ হয়

পাখি গান গায়, স’মিলের শব্দ হয়

পাখি গান গায়, জোয়ারের শব্দ হয়

পাখি গান গায়, নদী ভাঙা শব্দ হয়

পাখি গান গায়, মেঘ ফাটা শব্দ হয়

পাখি গান গায়, বাজ পড়া শব্দ হয়

পাখি গান গায়, আগুনের শব্দ হয়

পাখি গান গায়, মন পোড়া শব্দ হয়

পাখি গান গায়, কাচ ভাঙা শব্দ হয়

পাখি গান গায়, ডানা কাটা শব্দ হয়

পাখিটির জন্য তাই পৃথিবীর ছবি

আঁকতে বসেছি-- সমতল পৃথিবীর

যে পৃথিবীর কোথাও নেই খানাখন্দ

উচু নীচু পথ নেই, কংকর নেই,

ভাঙা কাচ নেই, নেই সুঁচালো আকড়,

পাখি ধরা ফাঁদ নেই, শিকারী বাজের

চোখ অন্ধ হয়ে আছে, বন্ধ হয়ে গেছে

বন্ধুকের সবকটা দোকান, দোকানী

এখন হয়েছে মালি, সাতরঙা ফুল--

লোহাগুলো ফিরে পেল মাটি, পাহাড়ের

বুকে ফিরে গেল তার হারানো পাথর

পৃথিবী এঁকেছি চারিদিকে সমতল

সমতলে পেঁজা তুলো সবুজ ঘাসের,

পাখিটির জন্য বৃক্ষ আঁকা কাটাহীন

কাটাহীনা ফণিমনসা, লাল গোলাপ

কাটাহীন শিমুলের ডাল, কি মান্দার,

পাতাগুলো আঁকলাম নীড়ের আদলে