বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
Published : 28 Dec 2023, 05:56 PM
কবি অধ্যাপক আবুবকর সিদ্দিক আর নেই; তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
বৃহস্পতিবার ভোরে খুলনার সিটি হাসপাতালে কবির মৃত্যু হয়েছে বলে তার মেয়ে বিদিশা সিদ্দিক জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাবা ভোরে পৌনে ৬টায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।“
আবুবকর সিদ্দিক খুলনা শহরের ৫ নম্বর মুন্সিপাড়ায় তার ছোট বোনের বাসায় থাকছিলেন গত একযুগ ধরে। পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন তিনি। তার মেয়ে বিদিশা এক সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের স্ত্রী ছিলেন।
অধ্যাপক আবুবকরের ছোট বোনের ছেলে শরিফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তার মামা। বুধবার সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার ভোরে মৃত্যুর পর বাদ জোহর খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে জানাজা শেষে টুটপাড়া কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাকে।
আবুবকর সিদ্দিক ১৯৩৪ সালের ১৯ আগস্ট মামাবাড়ি বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জেলার বৈটপুর গ্রামে তার পিতার নিবাস। বাবা মতিয়র রহমান পাটোয়ারি ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী, মা মতিবিবি ছিলেন গৃহিনী।
বাবার চাকরির সুবাদে আবুবকর ১৯৩৫ সাল থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হুগলি শহরে এবং ১৯৪৩ সালে বর্ধমান শহরে বসবাস করেন।
ছোটবেলা থেকে কবিতার সঙ্গে তার সম্পর্ক ওঠে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করা অবস্থায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় আবদুস সাত্তার সম্পাদিত ‘বর্ধমানের কথা’ পত্রিকায়।
বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, সরকারি পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং একই কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন আবুবকর সিদ্দিক। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
আবুবকর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। এরপর ঢাকার নটরডেম কলেজ ও কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার আগে বরিশালের চাখার ফজলুল হক কলেজ, দৌলতপুর বিএল কলেজ, বাগেরহাটের পিসি কলেজ, চট্টগ্রামের ফকিরহাট কলেজ, কুষ্টিয়া কলেজের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন তিনি।
শিক্ষকতার পাশাপাশি কবি, ঔপন্যাসিক, লেখক, ছোট গল্পকার হিসেবে সাহিত্য অঙ্গনে আবুবকর সিদ্দিকের বিচরণ ছিল।
১৯৮৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান কবি আবুবকর সিদ্দিক। এছাড়া বাংলাদেশ কথা শিল্পী সংসদ পুরস্কার, কলকাতার বঙ্গভাষা সংস্কৃতি প্রচার সমিতির পুরস্কার, খুলনা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, বাগেরহাট ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ঋষিজ পদকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সন্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন এই সাহিত্যিক।
আবুবকর সিদ্দিকের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ২০টির বেশি। এছাড়া চারটি উপন্যাস, ১৫টি গল্পগ্রস্থ ও একটি ছড়ার বই তিনি লিখেছেন।
তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে ‘ধবল দুধের স্বরগ্রাম’, ‘বিনিদ্র কালো ভেলা’, ‘হে লোকসভ্যতা’, ‘শ্যামল যাযাবর’, ‘মানুষ তোমার বিক্ষত দিন’, ‘মানব হাড়ের হিম ও বিদ্যুৎ’, ‘মনীষাকে ডেকে ডেকে’; উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘জলরাক্ষস’, ‘খরাদাহ’, ‘একাত্তরের হৃদভস্মা’, ‘বারুদপোড়া প্রহর’এবং ‘ভূমিহীন দেশ’। ‘চরবিনাশকাল’ তার অন্যতম ছোটগল্পগ্রন্থ; ছড়াগ্রন্থের নাম ‘হট্টমালা’।