Published : 20 Nov 2021, 02:59 PM
অনুবাদকের প্রসঙ্গকথা
সমসাময়িক অন্যান্য প্রধান স্প্যানিশ কবি আন্তোনিও মাচাদো, বিসেন্তে আলেইহান্দ্রো, গার্সিয়া লোর্কা, রাফায়েল আলবের্তি–এদের মতো হুয়ান রামোন হিমেনেসও আন্দালুসিও। জন্ম ১৮৮১ সালে, মোগের-এ। কাব্যিক গদ্যে লেখা প্রথম বইতেই তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯১৬ তে তিনি নিউইয়র্কে পাড়ি দেন, সেখানে তিনি বিয়ে করেন সেনোবিয়া কাম্প্রুবি দে আইমারকে। হিমেনেথ দম্পতির এক স্মরণীয় কাজ রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গদ্যের অসামান্য অনুবাদ। ইংরেজিতে এই বাঙালি কবির সৃষ্টিকলা তাদের প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করে। এর ছাপ ছড়িয়ে আছে হিমেনেথের মগ্ন গভীর কাব্যকলায়। ওই সময়ে শুধু তিনি নন, পরবর্তী কবি পাবলো নেরুদাও শুরুতে রবীন্দ্রনাথে মোহগ্রস্ত হন। তবে দ্রুত এ প্রভাব কাটিয়ে ওঠেন। বিশ্ব মন্দা, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, হৃদয়ের স্পর্শকাতরতা, মানবিক অঙ্গীকার তাঁকে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ ও সংগ্রামের দিকে টানে।
হিমেনেস সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ১৯৫৬ সালে-প্রধানত প্রথম দিকের রাবীন্দ্রিক অনুভব-মগ্নতায় আচ্ছন্ন কাব্যগ্রন্থগুলোর জন্যে। পরে পাবলো নেরুদাও নোবেল পুরস্কার পান। তবে রবীন্দ্র প্রভাবমুক্ত কাজের জন্যে তাঁর বিশ্বস্বীকৃতি।
এখানে হিমেনেস-এর সব কটি কবিতার ইংরেজি অনুবাদক উইলিস বার্নস্টোন। তার তর্জমাগুলো সামনে রেখে তাদের বাংলায় দাঁড় করানোর এই প্রয়াস। কবিতাগুলোর ইংরেজি শিরোনাম যথাক্রমে:
1. First Dawn, 2. Dawning, 3. Light, 4. Dawn, 5. Sounding Behind the wall, 6. You Second . মূল স্পেনের বাইরে ল্যাটিন আমেরিকায় স্পানিশ ভাষায় রবীন্দ্রানুশীলনের নির্ভরযোগ্য বিস্তারিত পাঠের জন্য দেখুন, রাজু আলাউদ্দিন দক্ষিণে সূর্যোদয়, অবসর, ঢাকা. ২০১৫।
ভোর-প্রথম যামে
আমরা আসছি ট্রেনে,
ছায়াঘন শীত নিজঝুম।
আর এটা যেন অবিরাম ওঠাপড়া-
আমরা জীবনে আসি
মরণ পেরিয়ে, আবার
মরণ ছুঁই জীবন যাত্রায়।
বাইরে মোরগ ডাকে, জীবনে
না কি মরণে? কেউ তা জানে না-
ছায়া ঘন শীত নিজঝুম।
প্রত্যূষ
সূর্য সোনালি মধু
ঢেলে দেয় মাঠে-হরিতে সবুজে-
পাথরে, দ্রাক্ষা-খেতে, টিলায়, প্রাঙ্গণে।
নীল ফুল হাওয়ায়-হাওয়ায়
কঠিন প্রাচীর ঘেঁষে সতেজ কোমল।
এখনও আসেনি কেউ তৈরি জমিতে
ফসল ফলাতে। যদিও শালিক পাখি
উড়ে উড়ে পাখা মেলে কিচিরে মিচিরে
জীবনের বার্তা এনে দেয়।
এখানে-সেখানে খোলা শহরে সবটা জুড়ে
অরুণ রঙিন পথ।
আলো
বাইরে আঁধারে তাড়া পাগলা হাওয়ার-
ঝরা পাতা নিয়ে খেলা।
ভেতরে সূর্যালোকে স্তম্ভিত উল্লাস-
আমার হৃদয়ে গভীর গোপনে একা।
ঘিরে থাকে তাকে অস্থির দেহপাশ।
এবং সূর্য পবিত্র রক্তিম
বিজন আসনে স্থির অনন্তকাল।
প্রভাত
আমার ঘুমের অতল গভীর তলে
ভুলেছে আকাশ কী বা তার পরিচয়।
তড়িঘড়ি আমি চোখ খুলি, আর
তাকাই ঊর্ধ্ব মুখে। অমনি অবাক!
মুছে যায় সব অচেতনতার ঘোর-
সবুজের মালা, শুদ্ধ গোপন
পবিত্র নীল, করুণ-এ-কপাল
ছোঁয়। আনন্দ ভেরি বাজে।
আকাশ একটা নাম শুধু নয়,
আকাশ, আকাশই,-আকাশ!
দেওয়ালের ওপার থেকে
ওপার থেকে ভেসে আসে
শুধু তোমার সুর-
মাঝখানে এক দেওয়াল মাত্র
পৃথক করে আকাশে আর ধরায়।
তাতেই এত ভয়!
সবাই আছে ওপারে-
দেখতে না পাও তুমি, না-পাই আমি।
মনে হলো যেন
মনে হলো তুমি আবেগমথিত ক্রোধে
যেন ঝড়ের আড়ালে সূর্যাস্তের আভা
রক্তিম গাল, অশ্রুধারাতে
ম্লান আলো পড়ে এখানে সেখানে-
গড়ে তোলে ওই তোমার করুণ কায়া।
অভিসিঞ্চনে পূর্ণতা পায়
বিষাদকাতর স্মরণের জালে
নিশ্চিত পায়ে বিপুল সন্ধ্যা ছায়া।
কোথায় দেখেছি এমন নগর শোভা-
পশ্চিমে সমুদ্রমুখো সারিবদ্ধ ঘর,
স্বচ্ছ দরজা সব,–ভেদ করে রক্ত লাল আলো-
অনন্য সুন্দর ভয়ংকরী,
যেন বা এক নারী?
কোন চেনা নারী নয়
জন্মের স্মরণ থেকে জাগ্রত উঠে আসা, তাই
নিশ্চিত ছিল তার আসা!