রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যধর্মী উপন্যাস শেষের কবিতা উপন্যাসের পাত্রপাত্রীরা এবার ধরা দিয়েছেন কোনো নাটক বা সিনেমায় নয়, ফটোস্টোরিতে।
Published : 29 Jun 2024, 05:21 PM
শিল্পকলা একাডেমির সাত নম্বর গ্যালারিতে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে ঠোঁটে চুরুট আর তাস হাতে শেষের কবিতার অমিত রায়ের৷ কিছুদূর এগুলে লাবণ্যর দেখাও পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
তবে সেখানে মূল দুই চরিত্র অমিত-লাবণ্যই কেবল নেই, আছেন শোভনলাল ও কেতকীও।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যধর্মী উপন্যাস শেষের কবিতা উপন্যাসের পাত্রপাত্রীরা এবার ধরা দিয়েছেন কোনো নাটক বা সিনেমায় নয়, ফটোস্টোরিতে।
এই ফটোস্টোরি তৈরি করেছেন স্থপতি ফওজিয়া জাহান। ৬৪টি স্থির চিত্রের মাধ্যমে পুরো উপন্যাসটি তুলে ধরা হয়েছে সেখানে।
ফটোস্টোরিত অমিত রায় চরিত্রে আছেন কলকাতার অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, লাবণ্যের চরিত্রে চিকিৎসক শ্রেয়া সেন। শোভন লাল হয়েছেন বাংলাদেশি অভিনেত শাশ্বত দত্ত এবং কেতকীর চরিত্রে পাওয়া গেছে শিরি ফারহানাকে।
শনিবার শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে রোববারও। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের সাত নম্বর গ্যালারিতে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছবিগুলো দেখা যাবে।
শেষের কবিতা নিয়ে তৈরি ফটোস্টোরির প্রকল্প প্রধান ও আলোকচিত্রী ফওজিয়া জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাহিত্যকে আরও সহজবোধ্য করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এই আয়োজন করা হয়েছে। যাতে নানা শ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষকে সাহিত্য চর্চার মধ্যে আনা যায়।
“শেষের কবিতা উপন্যাসটা পড়ে অনেকেই বলে পড়েছি, কিন্তু সে বুঝতে পারে না। এই ছবিগুলো দেখে, সঙ্গে যদি কেউ ক্যাপশনগুলো পড়ে- পুরো ঘটনাটা, এখানে কী বার্তা আছে, ছবিগুলো কী বলতে চাচ্ছে সব খুবই পরিষ্কারভাবে মাথায় চলে আসবে। আমরা চাই সাহিত্য সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক।”
শেষের কবিতা নিয়ে ফটোস্টোরি নির্মাণের পরিকল্পনা দুই বছর থেকে শুরু হলেও ছবিগুলোর শুটিং করা হয় চলতি বছরের এপ্রিলে বলে জানান ফওজিয়া জাহান।
তিনি বলেন, “ছবিগুলো নিয়ে বইও প্রকাশিত হয়েছে। গ্যালারির বুথ থেকে আগ্রহীরা বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।”
ফটোশুট প্রসঙ্গে ডা. শ্রেয়া বলেন, "পেশাগতভাবে আমি ডাক্তার, বর্তমানে ফরেনসিক মেডিসিনে এমডি করছি। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলাম বিশেষত রবি ঠাকুর আর নজরুলের অনেক কাজ আবৃত্তি আর অনুবাদ করেছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এর আগেও কিছু কাজ করেছি আমি। তাই এই ফটোস্টোরির অফার আসতেই আমি রাজি হয়ে যাই। আশা করি দর্শকের এই কাজ ভালো লাগবে।"
ছবিগুলোয় দেখা যায়, বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় দেশে ফেরার পর শুরু হয় তার বিয়ের তোড়জোড়। কিন্তু একসময় অমিত ঘুরতে যায় শিলং পাহাড়ে। সেখানে তার দেখা হয় লাবণ্যের সঙ্গে।
এভাবেই ছবিতে ছবিতে একে একে আগাতে থাকে শেষের কবিতার গল্প। ছবির পাশে লেখা রয়েছে ক্যাপশন।
প্রদর্শনী দেখতে মহাখালী ডিওএইচএস থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নওরীন জায়না আজিজী জানালেন ভিন্নধর্মী এই প্রদর্শনীর খোঁজ পেয়ে সহকর্মীর সঙ্গে দেখতে এসেছেন তিনি।
“একটু ডিফরেন্ট কিছু, সিরিয়াল ওয়াইজ দেখতে পাচ্ছি। অন্য প্রদর্শনীগুলো এভাবে থাকে না, অনেক সময় খুঁজে নিতে হয়। তবে উপন্যাস পড়ার সময় যেভাবে চরিত্রগুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলাম, তার থেকে একটু অন্য রকম। কিন্তু ভালো লাগছে, ভালো একটা উদ্যোগ।”
মিরপুর জোনের এডিসি হাসান মুহতারিম সজীবও এসেছেন পুরান ঢাকার ওয়ারী থেকে প্রদর্শনী দেখতে।
সজীব বলছেন, ছবির মাধ্যমে গল্প বলা দেখতে এসেছেন তিনি। এই উদ্যোগ তাকে চিন্তা করার খোরাক দিচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন তিনি।
“ইন্টারেস্টিং কিছু হলেই আসা হয়৷ এটা একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার৷ ফটোগ্রাফিক স্টোরি টেলিং দেখে মনে হলো এটা দেখা দরকার৷ উপন্যাসটা অনেকবার পড়া হয়েছে। এটা নিয়ে বেশকিছু ভিজ্যুয়ালও হয়েছে, কিন্তু ফিল্ম তো চিন্তা করতে দেয় না, শুধু অনবরত চলতে থাকে৷
“এই স্থির চিত্র নিজের মতো করে ভাবতে দিচ্ছে, চিন্তা করতে দিচ্ছে৷ কারণ সময় নিয়ে দেখা যাচ্ছে, ছবির মধ্যে ঢুকে পড়তে পারছি।”