Published : 15 Dec 2013, 10:34 PM
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ঘটনা, কেননা এর মাধ্যমেই জাতি হিসেবে হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা বাঙালিরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অধিকারী হলো। ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বে তারা মুক্তির আস্বাদ পেলেও সেসব স্থায়ী হয়নি, বেশিরভাগ সময় কেটেছে পরাধীনতার শৃঙ্খলে। ইতিহাস-কাঁপানো মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলিত করেছে এ দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা শত্র"কে মোকাবিলা করার জন্য বাধ্য হয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, চালিয়েছিল অসীম সাহসী অসম লড়াই। গেরিলার যেমন অস্ত্র, কবির তেমনি কলম। কবিতায়, চিত্রে, গানে, নাটকে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করার মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সৃজনশীল মানুষেরা, যারা জনগোষ্ঠির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। তাদের অনেকেই সরাসরি অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে, অস্ত্র, কলম ও কন্ঠে রক্ত ঝরিয়েছেন।
আমাদের সকল প্রধান কবিই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কালজয়ী কবিতা লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে রচিত হয়েছে অজস্র আবেগী কবিতা, সংখ্যায় তারা অগণিত। এসব কবিতার ভেতরে জসিমউদ্দিনের 'দগ্ধগ্রাম', সুফিয়া কামালের 'আজকের বাংলাদেশ', আহসান হাবীবের 'মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে কেমন', সিকান্দার আবু জাফরের 'বাংলা ছাড়ো', শামসুর রাহমানের 'স্বাধীনতা তুমি', হাসান হাফিজুর রহমানের 'যখন উদ্যত সঙ্গীন', সৈয়দ শামসুল হকের 'গেরিলা', শহীদ কাদরীর 'নিষিদ্ধ জার্নাল', রফিক আজাদের 'একজন মুক্তিযোদ্ধার আত্মসমর্পণ', নির্মলেন্দু গুণের 'স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো', আবুল হাসানের 'উচ্চারণগুলি শোকের', মুহম্মদ নূরুল হুদার 'আমরা তামাটে জাতি', সানাউল হক খানের 'সাতই মার্চ একাত্তর' মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের 'শহীদ স্মরণে', অসীম সাহার 'পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মঘাতী রক্তপাত', হুমাযুন কবিরের 'বাংলার কারবালা', আসাদ চৌধুরীর 'রিপোর্ট ১৯৭১', হেলাল হাফিজের 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়', খোন্দকার আশরাফ হোসেনের 'বাউসী ব্রিজ '৭১', মহাদেব সাহার 'ফারুকের মুখ', আবিদ আজাদের 'এখন যে কবিতাটি লিখব আমি', ফারুক মাহমুদের 'রাহেলা ফুফু', দাউদ হায়দারের 'বাংলাদেশ', আবিদ আনোয়ারের 'আমার মায়ের নামে তোপধ্বনি চাই', মিনার মনসুরের 'কী জবাব দেব', মারুফ রায়হানের 'সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ' প্রভৃতি সহজেই স্মরণে আসে। এসব কবিতায় পাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা, মানবিক আবেগ, স্বদেশপ্রেম, সাম্যচেতনা, ক্ষোভ ও মুক্তির তীব্র আকাক্সক্ষা। স্মরণযোগ্য উল্লেখিত কবিরা প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধকে বিষয় করে একাধিক কবিতা লিখেছেন, এ তালিকার বাইরেও রয়েছে অনেক আবৃত্তিযোগ্য কবিতা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যে আন্দোলনমুখর ঘটনাবলীর চূড়ান্ত পরিণতি সেসব আন্দোলনের বিশ্বস্ত বর্ণনা উঠে এসেছে তাঁদের কবিতায়। শামসুর রাহমানের 'আসাদের শার্ট',-এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়' উনসত্তরের গণআন্দোলনের সুমহান কাব্যিক দলিল। স্বাধীনতার প্রত্যাশায় উন্মুখ একটি জাতির চেতনাকে তিনি ধারণ করেছেন 'স্বাধীনতা তুমি' কবিতায়। কবির আর্তি, 'তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা/ তোমাকে পাওয়ার জন্য/আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়? আর কতবার দেখতে হবে খা-বদাহন?' স্বাধানতাকামী বাঙালি জাতির রক্তঝরা ইতিহাস আর তা পাওয়ার দুর্দমনীয় আকাক্সক্ষারই প্রতিধ্বনি। সিকান্দার আবু জাফরের 'বাংলা ছাড়ো' কবিতাটি সবুজ বাংলাকে দখলে নেয়া পশ্চিম পাবিস্তানী দানবের প্রতি গণহুঙ্কারের প্রতিধ্বনি; কবির সাথে আমরাও গর্জে উঠি, 'তুমি আমার আকাশ থেকে/সরাও তোমার ছায়া/তুমি বাংলা ছাড়ো।' বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে ঢেউ উঠেছিল তা ক্রমশ উত্তুঙ্গ হয়ে ওঠে। একুশের প্রথম প্রহরে লেখা মাহবুবুল আলম চৌধুরীর কবিতা গোটা বাংলাদেশের কন্ঠস্বর হিসেবে গর্জে উঠল 'কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি।' আবদুল গাফফার চৌধুরীর কবিতা 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' রূপ নিল কালজয়ী গানে। আলাউদ্দিন আল আজাদের কবিতা 'স্মৃতির মিনার' সেই অভয়ের বাণীই আমাদের শুনিয়েছিল যা মুক্তিযুদ্ধে অমিত সাহসে রূপান্তরিত হয়েছিল। আহসান হাবীবের 'মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে কেমন' একটি আলাদা স্বাদের কবিতা যেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের ঔৎসুক্যের আড়ালে প্রকাশ পেয়েছে সহমর্মিতা ও মাহাত্ম্যকে তুলে ধরার প্রয়াস।
২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর এই নয় মাস গোটা বাংলাদেশে নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছিল বর্বর পাকবাহিনী। জসিমউদ্দিনের 'দগ্ধগ্রাম' কবিতায় তাঁর কাব্যভাষার স্বভাবজাত সারল্যে ফুঠে উঠেছে এক অমানুষিক নিষ্ঠুরতার ছবি-
'কীসে কী হইল, পশ্চিম হইতে নরঘাতকরা আসি
সারা গাঁও ভরি আগুনে জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি
মার কোল থেকে শিশুরে কাড়িয়া কাটিল সে খান খান
পিতার সামনে মেয়েকে কাটিয়া করিল রক্তস্নান'
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস গোটা বাংলাদেশ ছিল অবরুদ্ধ, জনপদের পর জনপদ আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়েছে, অস্ত্র আর বেয়নেটের মুখে ছিল সাত কোটি মানুষ, নিরস্ত্র মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মা-বোনেরা হয়েছে ধর্ষিত। শহীদ কাদরীর 'নিষিদ্ধ জার্নাল' কবিতায় শত্র" বুলেটে নিহত কিশোরের বর্ণনায় সেই অবরুদ্ধ সময়ের চিত্র ফুটে উঠেছে:
'ধ্বংসস্তূপের পাশে, ভোরের আলোয়
একটা বিকলাঙ্গ ভায়োলিনের মতো দেখলাম তে-রাস্তার মোড়ে
সমস্ত বাংলাদেশ পড়ে আছে আর সেই কিশোর, যে তাকে
ইচ্ছের ছড় দিয়ে নিজের মতো করে বাজাবে বলে বেড়ে উঠেছিল
সেও শুয়ে আছে পাশে, রক্তাপ্লুত শার্ট পরে।'
সৈয়দ শামসুল হকের অনবদ্য পঙক্তি, 'আমি যেখানে যাই এ শহরের অবেলায় ক্রমাগত বেলা পড়ে যায়' অবরুদ্ধ ঢাকার ছবি তুলে ধরে। তাঁর 'গেরিলা' কবিতাটি কেবল বিষয়ে নয়, শব্দ-কোলাজে একজন লড়াকু গেরিলাকে ফুটিয়ে তুলেছে। একই শিরোনামে হাসান হাফিজুর রহমান লিখেন, 'সবুজ মানুষেরা আচম্বিতে আজ প্রত্যেকেই গেরিলা' এ কথাই বলে যে নিরস্ত্র বাঙালিকে পঁচিশে মার্চের কালোরাতের অন্ধকারে আক্রমণ করে বর্বর পাকবাহিনী ঠেলে দিয়েছে সেই প্রান্তে যেখানে প্রত্যেকেই একেকজন মুক্তিকামী গেরিলা। কবির অন্য কবিতা 'তোমার আপন পতাকা'য় স্বাধীন পতাকার দুঃখনিবারণী শক্তির কথা বলা হয়েছে: 'হাজার বছরের বেদনা থেকে জন্ম নিল/রক্তিম সূর্যের অধিকারী যে শ্যামকান্ত ফুল/নিঃশঙ্ক হাওয়ায় আজ ওড়ে, দুঃখ ভোলানিয়া গান গায়।/মোছাব তোমার মুখ সেই পতাকায়।'
আবুল হাসানের 'উচ্চারণগুলি শোকের' মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলির একটি। মুক্তিযুদ্ধের অনেক কবিতাই স্বভাবজ কারণেই রাগী ও শ্লোগানধর্মী; সেই ভীড়ে এ কবিতাটি ব্যতিক্রমী শৈল্পিক।
'হাঁটি হাঁটি শিশুটিকে আমি আর আজ
কোথাও দেখি না
নরম নোলক পড়া বৌটিকে আমি আর আজ
কোথাও দেখি না
কেবল পতাকা দেখি,
স্বাধীনতা দেখি!
তবে কি আমার ভাই আজ ওই স্বাধীন পতাকা?
তবে কি আমার বোন তিমিরের বেদীতে উৎসব?'
মুহম্মদ নূরুল হুদার 'বাঙালির জন্মতিথি' কবিতাটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উৎসর্গীত পঙক্তিমালার এক অপূর্ব সন্নিবেশ। কবি বিজয়ের প্রত্যুষে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি উচ্চারণ করেন গভীর শোকজড়িত অভিবাদন-
'তোমাদের হাড়গুলো জ্যোৎস্নারাতে উড়ে যাওয়া সাদা কবুতর
সুদূর ঝর্ণার জলে স্বপ্ন-ছাওয়া ঘাসের সবুজ;
তোমাদের হাড়গুলো অন্তহীন স্রোতস্বিনী, সুরের নির্ঝর
একতারা হাতে এক বাউলের মনোজ গম্বুজ;
তোমাদের হাড়গুলো বাংলার সীমানা ডিঙ্গানো
ক্রমশঃ বর্ধিষ্ণু এক হরিৎ বাগান
কারবাইন তাক করা-বেপরোয়া সৈনিকের গান;
তোমাদের হাড়গুলো বাংলার হৃদপিণ্ডে অবিনাশী ঝড়,
বাঙালির জন্মতিথি, রক্ত লেখা ষোল ডিসেম্বর।'
খোন্দকার আশরাফ হোসেনের 'বাউসী ব্রিজ '৭১' মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত একটি অন্যতম উজ্জ্বল কবিতা। কবি নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাই তাঁর কবিতায় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কাব্যিক বুনটে অসামান্য সংবেদনে ধরা পড়েছে।
'কাঠবিড়ালির মতো ত্রস্ত নৈপুণ্যে আমরা নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলাম,
তখন কৃষ্ণা একাদশীর ডাইনী রাত ছিলো গর্ভবতী, আর তার কিছুক্ষণ পর
ষাঁড়ের বাঁকানো শিঙ নিয়ে চাঁদ তার হাইডআউট থেকে বেরিয়ে এসেছিলো,
আকাশ-এরিনার অন্য কোণায় তখন মেঘ নামক এক যোদ্ধা অপেক্ষমাণ'
শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান, কেননা তারা দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। যুদ্ধে নিহত এমনি এক মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে লেখা 'নোটনের জন্য শোক' খোন্দকার আশরাফ হোসেনের আরেকটি অনবদ্য কবিতা।
মুক্তিযুদ্ধের রূপকার বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে রচিত নির্মলেন্দেু গুণের 'স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো' এক অনন্য কাব্যদলিল। নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় শেখ মুজিব হলেন সেই অমর কবি যার কবিতার প্রথম দুটি পঙক্তি, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম'। রেসকোর্সের ময়দানে সমবেত লাখো মানুষের কালো মাথার আন্দোলনে যে অনবদ্য মাঠ সেই মাঠকে কাব্যের পৃষ্ঠা বানিয়ে স্বাধীনতার কবি লিখছেন তাঁর কালজয়ী কবিতা। সমবেত জনতার অপেক্ষা, 'কখন আসবেন কবি?' মার্চের ঐ ঘোষণাই স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ যাকে রূপদান করেছে বাস্তবতায়। বঙ্গবন্ধুর স্মরণে মুহম্মদ নূরুল হুদা একটি কাব্যের নামকরণ করেছেন যিসাস মুজিব', কেননা যিশু খ্রীষ্টের মতো মুজিবকেও তাঁর জাতির জন্য আত্মোৎসর্গের ক্রুশকাঠে জীবন দিতে হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেমমূলক, নজরুলের বিদ্রোহ জাগানিয়া, জীবনানন্দের বাঙলার রূপমুগ্ধতাসমৃদ্ধ কবিতাসমূহের দ্বারা। তাদের প্রবলভাবে উদ্দীপ্ত করেছিল দেশপ্রেমের গানসমুহ, যেসব গান মূলতঃ সুরারোপিত কবিতা। ফ্রন্টে, বাঙ্কারে, রাতের অন্ধকারে তাদের বুকের ভেতর দীপ্যমান আলো হয়ে জ্বলেছে কবিতা, শ্র"তিতে বেজেছে দেশমাতৃকার প্রতি নিবেদিত গানের সুরধ্বনি। কেবল বাঙালি কবিরা নন, মুক্তিযুদ্ধ অনুপ্রাণিত করেছিল ভিনদেশী কবিদের। প্রখ্যাত মার্কিন বীট কবি এ্যালেন গীন্সবার্গের সুবিখ্যাত কবিতা 'সেপ্টেম্বর যশোর রোড', একাত্তরে এক কোটি বাঙালি শরণার্থীর অবর্ণনীয় দুর্ভোগকে দারুণ চিত্রিত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল সত্তর দশকের কবিদের কেননা সে সময়ে তারা সকলেই টগবগে যুবক। সত্তরের কবিতায় যে উচ্চকিত মেজাজ, রাগ ও দ্রোহ দেখা যায় তার প্রধান প্রভাবক মুক্তিযুদ্ধ। আশির দশকের কোনো কোনো কবির কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ অঙ্কিত হলেও বেশির ভাগ কবির কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের জোরালো উপস্থিতি নেই। নব্বই দশকে তা আরও ক্ষীয়মাণ হয়ে আসে। তবে নতুন প্রজন্মের কবিদের, যারা স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, কবিতার মাঝে ফিরে আসছে মুক্তিযুদ্ধ, এর অনুষঙ্গ, নব নব আবিষ্কারে। যেহেতু তাদের কবিতা এখনো দানা বাঁধছে, মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে রচিত পঙক্তির খোঁজে আমাদের জ্যেষ্ঠ কবিদের কাছেই যেতে হয়। সেসব কবিতাই মুক্তিযুদ্ধের কবিতার বিভিন্ন সংকলনে ঠাঁই পেয়েছে যেসব কবিতা থিমেটিক্যালি পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধ ঘিরেই আবর্তিত। সেটাই স্বাভাবিক। সংকলকদের ঘুরে ফিরে যেতে হয়েছে কিছু সুবিখ্যাত কবিতার কাছে। এসবের বাইরে বিপুল সংখ্যক কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ এসেছে খ-িত অবয়বে, অনুষঙ্গ হয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের কবিতায় আমরা যেসব উপাদান দেখি তার ভেতরে পাকবাহিনীর ধ্বংসলীলা, বাংলার মানুষের দুর্ভোগ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার প্রত্যাশা ইত্যাদি ঘুরে ফিরে এসেছে। অসংখ্য কবি তাদের রচনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আবেগ ও চিত্রকে ধারণ করেছেন। হতাশা, ঘৃণা, ক্রোধ, আশাবাদ, স্বদেশপ্রেম, মুক্তিআকাক্সক্ষা এসব কবিতার প্রধান আবেগ। তীব্রতম আবেগের কারণে অনেক কবিতাই উচ্চকিত। প্রচুর কবিতা বিবৃতিমূলক, যা কবিতা হিসেবে রচনাকে দুর্বল করেছে। বর্ণনামূলক পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে কবিরা একটি দ্যোতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। এসবকে পাশ কাটিয়ে এসব কবিতায় যে শুদ্ধতম আবেগ ফুটে উঠেছে তা সাধুবাদ পাবে। মুক্তিপ্রত্যাশী একটি জাতির আশা-আআক্সক্ষাকে ধারণ করেছে অজস্র জানা-অজানা কবির কলম, তাঁদের মস্তিস্কে মুক্তিযুদ্ধ অজস্র পঙক্তির ফুল ফুটিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চিরগর্বের সম্পদ, তেমনি সম্পদ একে ঘিরে রচিত সাহিত্য, কবিতা যার সুন্দরতম প্রকাশ!