সুদানে সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
Published : 18 Nov 2021, 11:46 AM
বুধবার কয়েক হাজার সুদানি রাজধানী খার্তুম এবং বাহরি ও ওমদুরমান শহরের রাস্তায় নেমে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী মিছিল করে, তারা বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর ও ২৫ অক্টোবরের অভ্যুত্থান নেতাদের বিচারের দাবি জানায়।
তিনটি শহরেই প্রতিবাদকারীদের জমায়েতে বাধা দিতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলি করে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও বন্ধ রাখা হয়।
সুদানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশ, উভয়পক্ষেই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভশনে শুধু আহতের কথা জানানো হলেও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এক মাস ধরে চলা বিক্ষোভে বুধবার সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন ছিল বলে চিকিৎসকদের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে মিত্রতা ঘোষণা করা সুদানের চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, “অভ্যুত্থান বাহিনীগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বুলেট ব্যবহার করেছে আর এতে বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর ছিল।”
তবে শুধু বাহরি শহরেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে তারা।
“বাহরিতে আজকের মতো সহিংসতা আর কখনো দেখিনি আমরা, এমনকি আগের শাসনকালেও না,” বলেন একজন বিক্ষোভকারী। তিনি জানান, বুধবার রাতে কাঁদুনে গ্যাসে শহরের বাতাস ভারী হয়ে ছিল, নিরাপত্তা বাহিনী সরাসরি বুলেট ব্যবহার করেছে।
রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদাতা জানিয়েছেন, এর প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তজুড়ে ব্যাপক প্রতিবন্ধক গড়ে তোলে, এতে সড়কগুলোতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
“এখন লোকজন আতঙ্কিত হয়ে আছে,” বলেছেন ওমদুরমানের একজন বিক্ষোভকারী।
এর আগে খার্তুমের একটি প্রধান সড়কে বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে শ্লোগান দেয়, “জনগণ বেশি শক্তিশালী, পিছিয়ে যাওয়া অসম্ভব।”
বিক্ষোভকারীরা আগের প্রতিবাদগুলোতে নিহতদের ও ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদকের ছবি বহন করছিল আর ‘বৈধতা রাস্তা থেকে আসে, কামান থেকে না’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিল।
পোর্ট সুদান, কাসালা, দোনগোলা, ওয়াদ মাদানি ও জেনেইনা শহরে হওয়া বিক্ষোভের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রধান সড়ক, চৌরাস্তাগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর বহু সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে; নীল নদের ওপরের সেতুগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি এবং পুলিশ প্রতিনিধির মন্তব্য নিতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
সামরিক নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে কোনো বাধা নেই আর সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের হত্যা করে না।
এক বিবৃতিতে চিকিৎসকদের কমিটি ও অন্যান্য ইউনিয়ন জানিয়েছে, ওমদুরমানে নিরাপত্তা বাহিনী একটি হাসপাতালে অভিযান চালানোর চেষ্টা করে এবং আরেকটি ঘেরাও করে রাখে। তারা কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে ও হাসপাতালে রোগী ঢুকতে বাধা দেয়।
বাহরির হাসপাতালগুলোতেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে এক বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন।
বুধবারে নিহতদেরসহ সুদানে অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসক কমিটি জানিয়েছে।