কাতালুনিয়ার স্বাধীনতাপন্থি দুটি নাগরিক সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতাকে জামিন না দিয়ে জেলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্পেনের হাইকোর্ট।
Published : 17 Oct 2017, 11:46 AM
স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির ওপর মাদ্রিদের সরাসরি শাসন চালুর ইঙ্গিতের মধ্যেই সোমবার কাতালান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির (এএনসি) প্রধান জর্ডি সানচেজ এবং অমনিয়াম কালচারালের প্রধান জর্ডি কুইক্সার্টের জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত।
এর মাধ্যমে আদালত ‘কঠোর অবস্থানের’জানান দিল বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
রয়টার্স বলছে, স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রশ্নে ১ অক্টোবরের গণভোটের পর এটাই শীর্ষ কোনো কাতালান নেতার জেল। সানচেজ ও কুইক্সার্ট জেলে থাকাকালীন সময়েই তাদের বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগের তদন্ত হবে।
স্পেনের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এই দুই নেতা গত মাসে বার্সেলোনায় স্বাধীনতাপন্থি এক বিক্ষোভের মূল আয়োজক ছিলেন। যে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বার্সেলোনার একটি ভবনের ভেতরে ন্যাশনাল পুলিশের একদল সদস্যকে আটকে ফেলে তাদের গাড়ি ধ্বংস করে দেন।
সানচেজ ও কুইক্সার্টের জামিন নাকচ হওয়ার পর তাদের প্রায় ২০০ সমর্থক বার্সেলোনায় কাতালান সরকারের সদরদপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘গণতন্ত্র’, কণ্ঠে ছিল ‘স্বাধীনতা’ স্লোগান।
স্বাধীনতার দাবিতে লাখ লাখ লোকের বিক্ষোভ আয়োজন করা এএনসি দুই কাতালান নেতাকে জেলে পোরার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কাতালুনিয়াজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
আদালতের আদেশের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমনও। টুইটারে তিনি লেখেন, “কাতালুনিয়ার নাগরিক সমাজের দুই নেতাকে শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা আয়োজনের কারণে জেলে দিয়েছে স্পেন। দুঃখজনকভাবে আমরা আবারও রাজবন্দি পেলাম।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে পুজদেমন স্পেনের সাবেক স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ওই সময়ও অনেক রাজনৈতিক নেতাকে জেলে পোরা হয়েছিল।
রাষ্ট্রদ্রোহীতার একই অভিযোগে মাদ্রিদ হাই কোর্ট কাতালান পুলিশ প্রধান জোসেফ লুইস ত্রাপেরোর পাসপোর্টও জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বার্সেলোনায় ভবনের ভেতর আটকে থাকা ন্যাশনাল পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে কার্যকর নির্দেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ত্রাপেরো।
গণভোটের দিন কাতালান পুলিশ স্পেনের পাঠানো ন্যাশনাল পুলিশের তুলনায় অনেক নমনীয় থাকায় স্বাধীনতাপন্থি অনেকের চোখেই নায়ক ত্রাপেরোকে তদন্ত কর্মকর্তারা আটক করতে চাইলেও আদালত তাতে সাড়া দেয়নি।
স্পেন সরকারের বিরোধিতা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আয়োজিত ১ অক্টোবরের গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ৯০ শতাংশের রায় পড়ে বলে ভাষ্য কাতালান সরকারের। যদিও ব্যাপক পুলিশি বাধার মুখে সেদিন ৪৩ শতাংশের বেশি ভোট জমা পড়েনি।
ওই ফলাফলের ভিত্তিতেই গত মঙ্গলবার কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ‘প্রতীকী ঘোষণা’ দেন পুজদেমন; ভাষণে স্পেনের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে সেই ঘোষণার কার্যকারিতা স্থগিত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
এরপরই স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কাতালান নেতাকে সুস্পষ্ট অবস্থান জানাতে সোমবার পর্যন্ত সময় দেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয়। কাতালুনিয়ার অবস্থান যদি স্বাধীনতার পক্ষে হয়, তা হলে সিদ্ধান্ত বদলাতে দেওয়া হয় ‘আরও চারদিন’।
ওই জিজ্ঞাসার জবাবে সোমবার দেওয়া চিঠিতে পুজদেমন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে স্পষ্ট কিছু না জানিয়ে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে স্পেনের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছার কথা জানান।
প্রত্যুত্তরে রাখয় বলেন, কাতালান নেতার অবস্থান মাদ্রিদকে সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ চালুর কাছাকাছি ঠেলে দিয়েছে। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পেন সরকার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শাসনে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
রয়টার্স বলছে, কাতালুনিয়াকে কেন্দ্র করে চলা সাম্প্রতিক এই সঙ্কট ইউরোজোনের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ স্পেনের ব্যবসা বাণিজ্যেও প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে বার্সেলোনা থেকে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যালয় মাদ্রিদে স্থানান্তর করেছে।
সোমবার দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) জানিয়েছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আগামী বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।