যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের একটি ক্যাসিনো থেকে উন্মুক্ত কনসার্টের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে; আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ।
Published : 02 Oct 2017, 12:50 PM
রোববার ছুটির রাতে ম্যান্ডালে বে ক্যাসিনোর পাশে উন্মুক্ত চত্বরে রুট নাইনটি ওয়ান হারভেস্ট কনসার্ট চলাকালে এই গুলির ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ‘ম্যাস শুটিং’ হিসেবে বর্ণনা করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
৬৪ বছর বয়সী স্থানীয় স্টিভেন প্যাডক নামে এক ব্যক্তিকে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; অভিযানের মুখে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস হামলাকারীকে তাদের লোক বলে দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা তা নাকচ করছেন।
লাস ভেগাস মেট্রোপলিটন পুলিশের শেরিফ জোসেফ লম্বার্ডো প্রথমে জানিয়েছিলেন, ওই ক্যাসিনোর ৩২ তলায় সন্দেহভাজন একজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
পরে পুলিশ জানায়, স্টিভেন প্যাডক আত্মহত্যা করেছেন।
প্যাডেক কী কারণে এই কাজটি করেছেন, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তার ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কেও পুলিশ কোনো ধারণা দিতে পারেনি। তবে তিনি সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আইএসের পক্ষে দাবি তোলা হয়েছে, এক মাস আগে প্যাডক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
প্যাডকের সঙ্গী এশীয় নারী মারিলু ডেনলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানিয়েছে, এই নারী ঘটনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ছিলেন এবং তিনি এতে জড়িত নন বলে তারা মনে করছেন।
ম্যান্ডালে বে ক্যাসিনোর যে কক্ষ থেকে প্যাডক গুলি ছুড়েছিলেন, সেখানে তল্লাশি চালিয়ে ১০টির বেশি মেশিনগান ও রাইফেল পাওয়ার কথা পুলিশ জানিয়েছে।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যান্ডালে বে ক্যাসিনোর ৩২ তলা থেকেই পাশের খোলা জায়গায় কনসার্টে জড়ো হওয়া ২০ হাজারের মতো মানুষের উপর বৃষ্টির মতো গুলি চালানো হয়।
Horrifying footage shows panicked concert goers attempt to flee the Las Vegas strip as a gunman opens fire near Mandalay Bay Casino pic.twitter.com/l4dmzk7nk8
— Izak Pratt (@IzakPratt) October 2, 2017
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, গান চলার মধ্যেই হঠাৎ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির আওয়াজ শুরু হলে কনসার্ট থমকে যায়। গান শুনতে আসা দর্শকরা খোলা জায়গায় মাথা নিচু করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন।
কয়েক সেকেন্ড বিরতির পর আবার গুলির শব্দ শুরু হয়; সেই সঙ্গে শুরু হয় আতঙ্কিত মানুষের ছুটোছুটি আর চিৎকার। পুলিশ লাস ভেগাস বুলেভার্ডের একটি অংশ বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়।
মাইক টমসন নামের এক ব্রিটিশ পর্যটক বিবিসিকে বলেন, “বহু লোক আতঙ্কে দৌড়াচ্ছিল, চরম বিশৃঙ্খলা…। একজনের সারা গায়ে রক্ত দেখে আমি বুঝলাম, সাংঘাতিক কিছু ঘটে গেছে।”
লাস ভেগাসে এই কান্ট্রি মিউজিক ফেসটিভাল চলছিল গত শুক্রবার থেকে। রোববার মধ্যরাতে যখন এই গুলির ঘটনা ঘটে, সে সময় মঞ্চে গাইছিলেন জেসন আলডিন। গান শুরুর পরপরই গুলির শব্দের মধ্যে থমকে যেতে হয় তাকে এবং তার দলকে।
ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আজ রাতে যা ঘটল তা ভয়ঙ্কর বললেও কম হয়। কি বলব, আমি বুঝতে পারছি না এখনও। আমি আর আমার দলের সবাই সুস্থ আছি।”
হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের আনন্দের একটা রাত কাটানোর কথা ছিল, সেজন্যই তারা এসেছিলেন, কিন্তু যা ঘটল, তাতে আমার বুক ভেঙে গেছে।”
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এটা পুরোপুরি একটি ‘শয়তানের কাজ’।
After the Las Vegas shooting, people used metal barricades and wheelbarrows to transport injured away from the scene https://t.co/syyICPtSdQ pic.twitter.com/KgvzhNL0qS
— CNN (@CNN) October 2, 2017
ঘটনার পর লোহার ব্যারিকেড ভেঙে এবং হুইলব্যারোতে করেও আহতদের সরিয়ে নিতে দেখা যায় মানুষকে। বহু আতঙ্কিত মানুষ সে সময় বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও লাস ভেগাসের ম্যাকারান এয়ারপোর্টে আশ্রয় নেয়।
ওই বন্দুকধারী ব্যবহার করেছে এমন দুটি গাড়ির খোঁজে মান্দালয় বে ক্যাসিনোর আশপাশের বিভিন্ন হোটেল ঘিরে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ম্যাকারান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঘণ্টাখানেক বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখে; দুই ডজন ফ্লাইটকে অন্য বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে লাস ভেগাসের আরও কয়েকটি জায়গায় গুলির খবর পাওয়ার কথা বলা হলেও পুলিশ জানায়, সেসব তথ্য সঠিক নয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে অস্ত্র আইন সবচেয়ে শিথিল নেভাডায়। নাগরিকরা সেখানে অস্ত্র বহন করতে পারে এবং অস্ত্রের মালিক হিসেবে তাদের নিবন্ধনও নিতে হয় না।
দোকান থেকে অস্ত্র কেনার সময় ক্রেতার তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও সেই ক্রেতা আবার অন্যের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে দিতে পারেন। অ্যাসল্ট রাইফেলের মত স্বয়ংক্রিয় বা আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বিক্রির ওপর সেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই এবং গুলি কেনার ক্ষেত্রেও কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া নেই।
গতবছর ১২ জুন ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে সমকামীদের একটি নৈশক্লাবে গুলি চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করে এক যুবক। এতদিন পর্যন্ত সেটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে গুলি করে হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনা, যার দায় স্বীকার করেছিল আইএস।