যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার বিদায়ী ভাষণে আমেরিকার নাগরিকদের গণতন্ত্র রক্ষায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
Published : 11 Jan 2017, 10:06 AM
তিনি বলেছেন, আট বছর আগে তিনি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তার তুলনায় ‘যে কোনো বিচারে আমেরিকা এখন ভালো ও শক্তিশালী অবস্থানে আছে’।
কিন্তু যখনই মানুষ নিশ্চিন্ত হয়েছে, তখনই আবার গণতন্ত্র নতুন হুমকির মুখে পড়েছে বলে দেশের জনগণকে সতর্ক করেছেন তিনি।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সব বিভাজনকে অতিক্রম করে পরস্পরের মতামতকে শ্রদ্ধা করা শিখতে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আমাদের মনোযোগ দিতে হবে, সবার কথা শুনতে হবে।”
“For all our outward differences, we in fact all share the same proud title…Citizen.” —@POTUS #ObamaFarewell https://t.co/2AM3wOII3z
— The White House (@WhiteHouse) January 11, 2017
“We must guard against a weakening of the values that make us who we are.” —@POTUS #ObamaFarewell https://t.co/pRwmeNAWmg
— The White House (@WhiteHouse) January 11, 2017
পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া বারাক ওবামার বয়স এখন ৫৫।
তার উত্তরসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। দায়িত্ব নিয়েই ওবামার নেওয়া বেশ কিছু নীতি বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে শিকাগোতে ওবামার বিদায়ী ভাষণের সময় হাজার হাজার সমর্থক স্লোগান ধরেন- ‘আরও চার বছর, আরও চার বছর’।
জবাবে ওবামা বলেন, “তা আমি পারি না।”
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন না। আর ওবামা প্রেসিডেন্টদের শান্তিপূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তরকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘হলমার্ক’ হিসেবে বর্ণনা করে।
তিনটি বিষয়কে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। এগুলো হল- অর্থনৈতিক বৈষম্য, জাতিগত বিভেদ এবং ‘অলীক কল্পনায় ডুবে থাকা’ সমাজের বিভিন্ন অংশ, যাদের মতামত সাধরণ বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
২০০৮ ও ২০১২ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও এই শিকাগোতেই সমর্থকদের সামনে এসে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ওবামা। তিনি বিদায়ও বললেন সেখানেই। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়।
জাতির উদ্দেশে শেষ বক্তৃতায় ওবামা বলেন, বিদায় বেলায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে একটি অনুরোধ তিনি আমেরিকানদের করতে চান।
“আমি আপনাদের বলছি, বিশ্বাস রাখুন। আমি পরিবর্তন এনে দিতে পারব কি না- সে বিষয়ে নয়, আস্থা রাখুন নিজেদের ওপর।”
সতর্ক না হলে গণতন্ত্র সঙ্কটে পড়তে পারে- এই হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “পরিবর্তন তখনই হয়, যখন সাধারণ মানুষ তা চায়।... আমাদের প্রত্যেকের আলাদা স্বপ্ন, ঘাম আর পরিশ্রম মিলে তৈরি হয় সকলের স্বাধীনতা।”
"My fellow Americans, it has been the honor of my life to serve you." —@POTUS #ObamaFarewell https://t.co/anw8vqHHp8
— The White House (@WhiteHouse) January 11, 2017
.@POTUS to @FLOTUS: “You’ve made me proud. You’ve made your country proud.” https://t.co/JLR06kKwyb
— The White House (@WhiteHouse) January 11, 2017
বিদায়ী ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান ওবামা। দায়িত্ব পালনকালে সহযোগিতার জন্যযুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
“আপনাদের জন্য দায়িত্ব পালন আমাকে সম্মানিত করেছে, গর্বিত করেছে।... প্রত্যেকটি দিন আমি আপনাদের কাছ থেকে শিখেছি। আপনারা আমাকে ভালো প্রেসিডেন্টে পরিণত করেছেন, আপনারাই আমাকে ভালো মানুষে পরিণত করেছেন।”
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওবামার বিদায়ী ভাষণ শুনতে ২০ হাজারের বেশি সমর্থক হাজির ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।
ভাষণের সময় উপস্থিত ছিলেন ওবামার স্ত্রী ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা, মেয়ে মালিয়া; ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন। হোয়াইট হাউজে থাকার সময় এদের প্রত্যেকের ‘ত্যাগের কথা’ আলাদা করে স্মরণ করেন ওবামা।
তিনি আমেরিকার দরজা সবসময় সবার জন্য খোলা রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে সবাইকে বিভাজনের বদলে আইনের প্রতি অবিচল থাকতে আহ্বান জানান।
মুসলিম অভিবাসীদের বিভাজনের মধ্যে ঠেলে দেয়ার বিরোধিতায় তিনি বলেন, “তারা অন্য সব আমেরিকানদের মতই দেশপ্রেমিক, তারা আমাদের মতই এ দেশকে ভালোবাসে।”
জাতির উদ্দেশে ওবামা বলেন, “আমরা যেন সেই মানুষ না হই- যারা ভাবে, তাদের মতামতই ‘তথ্য’; বরং আমাদের সেই মানুষ হয়ে ওঠা উচিত, যারা প্রমাণের ভিত্তিতে তথ্যকে আলিঙ্গন করে।”
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেন, গত বছর সব বর্ণ, লিঙ্গ ও বয়সভেদে মার্কিন নাগরিকদের আয় বেড়েছে। আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ‘অনেকখানি সফল’ হয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শিকাগোতে এটিই ছিল ওবামার শেষ সফর। কেবল তাই নয়, এটি ছিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘এয়ারফোর্স ওয়ানে’ তার শেষ যাত্রা।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জশ আর্নেস্ট জানিয়েছেন, দুই মেয়াদে ওবামা মোট ৪৪৫টি যাত্রায় বিমানটিকে সঙ্গী করেছিলেন। এই বিমানে তার কেটেছে দুই হাজার ৮০০ ঘণ্টার বেশি, অর্থাৎ প্রায় ১১৬ দিন।
বিদায় বেলায় ওবামা আগের ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মতই জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
এপি ও এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের ওই জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭ শতাংশ নাগরিক এখনও ওবামার প্রতি আস্থাশীল।
মেয়ে সাশার স্কুলের জন্য হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর আরও দুই বছর ওবামা ওয়াশিংটনে থাকবেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।