তাইওয়ানের চারপাশের সমুদ্র দিয়ে পণ্য পরিবহনে বিশ্বের ব্যস্ততম কয়েকটি পথ রয়েছে।
Published : 04 Aug 2022, 09:24 PM
তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়ার কারণে বিশ্ববাণিজ্য এবং পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্যিক ভ্রমণ বিঘ্নিত হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে।
তাইওয়ানের চারপাশের সমুদ্র দিয়ে পণ্য পরিবহনে বিশ্বের ব্যস্ততম কয়েকটি রুট রয়েছে। চীন সেখানে গোলাগুলির মহড়া চালানোয় বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে অন্য পথ ধরতে হচ্ছে।
ফলে ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই নাজুক অবস্থায় থাকা বিশ্ববাজারের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উপর চাপ আরও বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ান ঘিরে ছয়টি পয়েন্টে সামরিক মহড়ার ঘোষণা দেয় চীন। মঙ্গলবার রাতেই তাইওয়ান পৌঁছেছিলেন পেলোসি।
সফরশেষে পেলোসির বিদায়ের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চীনের নৌ, বিমান ও অন্যান্য সামরিক বাহিনী তাইওয়ানের চারপাশের আকাশ ও সমুদ্রে মহড়া শুরু করে।
মহড়ার যে আয়োজন তা নজিরবিহীন বলে জানিয়েছে সিএনএন। এটি যে পেলোসির তাইওয়ান সফরের কারণে সরাসরি শক্তির প্রদর্শন তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে। চীনের এই সামরিক মহড়া রোববার শেষ হওয়ার কথা।
মহড়ায় চীন দীর্ঘ-পাল্লার ‘লাইভ-ফায়ার এক্সারসাইজ’ করছে। তারা যে ছয়টি পয়েন্টে মহড়া করছে তার অন্তত তিনটি সমুদ্রে তাইওয়ানের দাবি করা ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে। এই এলাকার সমুদ্র এবং আকাশ নিজেদের বলে দাবি করে তাইওয়ান।
দ্বীপদেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম সাগরে বেশ কয়েকটি দংফেং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীন। এর প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ান সংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা পদ্ধতি সচল করেছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক জলপথ ও আকাশপথে চীনের সামরিক মহড়া পরিচালনার বিষয়টিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘অনুচিত আচরণ’ বলে বর্ণনা করেছে তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগেসিভ পার্টি (ডিপিপি)।
১১০ মাইল চওড়া তাইওয়ান স্ট্রেইট বা তাইওয়ান প্রণালী তাইওয়ান দ্বীপ এবং এশিয়া মহাদেশকে বিভক্ত করেছে।
চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মত উত্তরপূর্ব এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে বাকি বিশ্বের পণ্যবাহী জাহাজ যোগাযোগ এই প্রণালী দিয়েই হয়। এটি বিশ্বের ব্যস্ততম পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলকারী সমুদ্র পথ।
লন্ডন ভিত্তিক শিপিং কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ভ্যাসেলসভ্যালু জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের জলসীমায় কন্টেইনারবাহী ২৫৬টি জাহাজ এবং অন্যান্য আরও নৌযান অবস্থান করছে। আগামী রোববারের মধ্যে সেখানে আরো ৬০টির বেশি পণ্যবাহী জাহাজ যাওয়ার কথা।
রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা পর্যন্ত সামরিক মহড়া চালানোর কথা জানিয়েছে চীন। ভ্যাসেলসভ্যালুর ট্রেড ফ্লো বিশেষজ্ঞ পিটার উইলিয়ামস বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা অনেক বেশি।’’
তাইওয়ানের চারপাশের বাণিজ্য পথ যদি এমনকী সাময়িকভাবেও বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে তার প্রভাব শুধুমাত্র ভবিষ্যতের বাণিজ্য, ভ্রমণ এবং অর্থনীতির উপরই পড়বে না বরং সেটি সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামূলক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির চিত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ইকোনোমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান বিশেষজ্ঞ নিক ম্যারো।
চীনের সামরিক মহড়ার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু পণ্যবাহী জাহাজ মালিকদের ধারণা, মহড়ার কারণে তাদের পথ পরিবর্তন করতে হবে। তাই পণ্য পৌঁছাতে দেরি হবে, যে কারণে পণ্য বিক্রিতে লোকসান হতে পারে এবং শ্রমিকদেরও বাড়তি মজুরি দিতে হবে। সব দিক দিয়েই তাদের খরচ বেড়ে যাবে, যা পণ্যমূল্যে প্রভাব ফেলবে।
কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আগে থেকেই বিপর্যস্ত হয়ে আছে। পণ্য প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে চরম মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
এখন তাইওয়ানে যে কোনওরকম সংঘাতের ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি আরও মারাত্মক রূপ নেবে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে তাইওয়ানের আধিপত্য রয়েছে। তাই সেখানে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বে কম্পিউটার চিপের ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে, যা সব ধরনের আধুনিক ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তাছাড়া, তাইওয়ানে সাতটি বড় বড় সমুদ্র বন্দর রয়েছে। তাইওয়ানের সমুদ্র ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বুধবার তিনটি নোটিস জারি করেছে। ওই নোটিসগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজকে কিলুং, তাইপে, কাওশিউং এবং অন্যান্য নগরীর বন্দরের জন্য বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।