জাতিসংঘ সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধ যদি না থামে এবং ত্রাণ সরবরাহ না বাড়ে তাহলে উত্তর গাজা আগামী মে মাসের মধ্যেই দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে।
Published : 19 Mar 2024, 11:42 PM
গাজার ২০ লাখ মানুষ ‘মারাত্মক পর্যায়ের ভয়াবহ খাদ্য অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’ বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিবিসি-কে ব্লিনকেন বলেন, এই প্রথম গোটা জনগোষ্ঠী এমন গুরুতর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
যারা খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে আছে তাদেরকে তা সরবরাহ করাকে অগ্রাধিকার দিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছেন ব্লিনকেন।
জাতিসংঘ সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধ যদি না থামে এবং ত্রাণ সরবরাহ না বাড়ে তাহলে উত্তর গাজা আগামী মে মাসের মধ্যেই দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে।
ব্লিনকেন ফিলিপিন্স সফরকালে ওই সতর্কবার্তা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন। ওই অঞ্চলে অক্টোবরের পর থেকে এটি তার ষষ্ঠ সফর।
গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চলার মধ্যে ব্লিনকেন এই সফরে যাবেন। ইসরায়েলের আলোচকদের মঙ্গলবারেই লড়াই বন্ধে হামাসের সঙ্গে নতুন করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হতে আলোচনা শুরু করার কথা।
গত পাঁচ মাস ধরে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন গাজার বাসিন্দারা। বাস্তবিক অর্থে এখনও সেখানকার সব মানুষ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় সেখানকার কৃষিজমি ও খাদ্য অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ ট্রাক ঘিরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত তদারকির কারণে ত্রাণসাহায্য মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না বলে জানিয়েছে সাহায্য সংস্থাগুলো।
বিশ্বে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দানকারী সংস্থা ‘দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) বলছে, গাজার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যেই অনাহারে আছে। বাকি যারা আছে, তারাও জুলাই মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে।
খাবারের সংকট সবচেয়ে বেশি গাজার উত্তরাঞ্চলে। তিনটি জাতিসংঘ সংস্থা এবং কয়েকটি ত্রাণ সংগঠন নিয়ে গঠিত আইপিসি গত সোমবার পরিস্থিতি মূল্যয়ন করে বলেছে, আশু ব্যবস্থা নেওয়া না হলে উত্তর গাজায় এখন থেকে আগামী মে মাসের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। ওই অঞ্চলে লড়াইয়ের মধ্যে আটকা পড়ে আছে ৩ লাখ মানুষ।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহতা তুলে ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন এবারই সবচেয়ে জোরাল বার্তা দিয়েছেন।
বিবিসি-র এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গাজার শতভাগ মানুষ মারাত্মক পর্যায়ের ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এও দেখছি যে, এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজার একশতভাগ মানুষের মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।
“যেখানে সুদানে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের মানবিক ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন এবং আফগানিস্তানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের সহায়তা প্রয়োজন। সুতরাং, এ থেকেই গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কতটা জরুরি এবং একে অগ্রাধিকার দেওয়া কতটা অপরিহার্য তা বোঝা যায়।”
দাতব্য সংস্থা পভার্টি চ্যারিটি কেয়ারের তথ্যমতে, সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে উত্তর গাজায় অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের ২৩ জনই শিশু।
গাজার হাসপাতালগুলো অনাহারে, অপুষ্টিতে থাকা শিশু দিয়ে ভরে উঠছে। গাজার রাফাহ নগরীর আল-আওদা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গত সপ্তাহে রয়টার্সের সাংবাদিকরা মারাত্মকভাবে অপুষ্টির শিকার ১০ শিশুকে দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
পবিত্র রামজান মাসের শুরু থেকেই গাজার বাসিন্দারা মুখোমুখি হয়েছে নিষ্ঠুর বাস্তবতার। যে রমজান মাসে মুসলমানরা সারা দিন খাবার না খেয়ে রোজা রাখে, সেটিই এখন গাজাবাসীর সামনে দুর্ভিক্ষ হয়ে এসেছে।