ইনি সোফিয়া, একজন রোবট। সৌদি আরবে প্রথমবার জনসম্মুখে এসেই তিনি তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
Published : 28 Oct 2017, 02:51 PM
গত সোমবার রিয়াদে ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ শীর্ষক এক সম্মেলনে সোফিয়াকে দেওয়া হয়েছে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব।
বিশ্বের কোনো দেশে রোবটকে নাগরিকত্ব দেওয়ার এমন ঘোষণা এটাই প্রথম।
বিবিসি লিখেছে, সেই অনুষ্ঠানে মাথা নেড়ে হাসিমুখে সোফিয়ার কথা বলার ছবি আর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
কিন্তু তারপরই শুরু হয় বিতর্ক। অনেকে প্রশ্ন তোলেন- সৌদি আরবে নারীর চেহারায় একজন রোবট নাগরিক কি তবে সৌদি নারীদের চেয়েও বেশি অধিকার ভোগ করবে?
হংকংয়ের কোম্পানি হ্যান্সন রোবোটিক্সের তৈরি সোফিয়া রিয়াদের ওই অনুষ্ঠানে ইংরেজিতে কথা বলে সবাইকে মুগ্ধ করে। অবশ্য প্রকাশ্যে সৌদি নারীদের পর্দা করার নিয়ম থাকলেও সোফিয়ার মাথায় তখন কাপড় ছিল না।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অ্যান্ড্রু রস সরকিন সোফিয়াকে নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, “এই মাত্র আমরা জানতে পারলাম… সোফিয়া, আশা করি তুমি শুনছ। প্রথম রোবট হিসেবে তোমাকে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।”
উত্তরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সোফিয়া বলে, “এই অনন্য সম্মানের জন্য আমি গর্ব অনুভব করছি। বিশ্বে প্রথম কোনো রোবটকে নাগরিকত্ব দেওয়ার এ ঘটনা ঐতিহাসিক।”
রোবট সোফিয়ার সৌদি নাগরিকত্ব পাওয়ার খবরে প্রশংসার বন্যা বয়ে যায় সোশাল মিডিয়ায়। সোফিয়াকে নিয়ে একটি হ্যাশট্যাগ প্রথম ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩০ হাজার বার শেয়ার হয়।
"It is historical to be the first robot in the world to be recognized with citizenship." Please welcome the newest Saudi: Sophia. #FII2017 pic.twitter.com/bsv5LmKwlf
— CIC Saudi Arabia (@CICSaudi) October 25, 2017
কিন্তু এরপর শুরু হয় ঠাট্টা, সমালোচনা। সোফিয়া সৌদি আরবের অভিভাবকত্ব আইন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন- এরকম একটি বিদ্রুপাত্মক আরবি হ্যাশট্যাগ শেয়ার হয় ১০ হাজার বার।
বিবিসি লিখেছে, সৌদি নিয়ম অনুযায়ী কোনো মেয়েকে জনসমাগমস্থল যেতে হলে তার সঙ্গে একজন পুরুষ অভিভাবক থাকতে হবে।
টুইটারে একজন প্রশ্ন তোলেন- সোফিয়ার সঙ্গে কোনো পুরুষ অভিভাবক নেই, সে বোরকাও পড়ে না, মাথাও ঢাকে না- কীভাবে সম্ভব?
Sofi Since You Became Saudi Now You Are Not Allowed To Walk in Public Without Your Hijab And of course Abaya too pic.twitter.com/HJIXfxDODe
— M420 (@moonshiner99) October 25, 2017
আরেক টুইটার ব্যবহারকারী রোবট সোফিয়ার ছবিতে কালো হিজাব পরিয়ে সেই ছবি শেয়ার করে লিখেছেন- কিছুদিন পর সোফিয়াকে এমনই দেখাবে।
একটি নারী রোবটের অধিকার কি একজন সৌদি নারীর চেয়ে বেশি?
রোবট সোফিয়াকে সৌদি নারীদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পাশপাশি আরও একটি প্রশ্ন ঘুরতে থাকে সোশাল মিডিয়ায়। যে রকম তড়িৎ গতিতে সোফিয়াকে সৌদি নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন অনেকে।
মুর্তজা হোসেন নামের একজন সাংবাদিক তার পোস্টে লেখেন- বহু অভিবাসী শ্রমিক এই দেশে প্রায় পুরোটা জীবন পার করে দিলেও তাদের আগেই সৌদি নাগরিকত্ব পেয়ে গেল একটি রোবট।
লেবানিজ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক করিম চাহায়েব লিখেছেন- লাখ লাখ মানুষ যখন রাষ্ট্রহীন, সোফিয়া নামের একটি রোবট তখন সৌদি নাগরিকত্ব পেল।