পঞ্চগড়ের ঘটনা বিএনপির ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা’: হাছান মাহমুদ

তিনি অভিযোগ করেন, দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে বিএনপি

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

পঞ্চগড়ের ঘটনা সারাদেশে বিএনপির ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অংশ’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে তো বিএনপি। পঞ্চগড়ে যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে, সেখানে যারা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাতে হামলা চালিয়েছে, তারা কারা সেটা তো পুলিশের খাতায় আছে।

“তাদের বেশিরভাগই বিএনপির সমর্থক। তারাই সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, হামলা চালিয়েছে এবং সে হামলায় দু’জন মৃত্যুবরণ করেছে। মির্জা ফখরুল সাহেব নিজেদের দায়টা এড়ানোর জন্য দুইদিন পরে রোববার বক্তব্য রেখেছেন। আসলে এ ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরাই মূলত দায়ী।”

পঞ্চগড়ে শুক্র থেকে রোববার তিন দিনব্যাপী ‘সালানা জলসা’র আয়োজনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ব্যাপক সহিংসতা হয়। জলসা বন্ধের দাবিতে মিছিলকারীরা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়।

এ সময় ট্রাফিক পুলিশের স্টেশন, পঞ্চগড় বাজার মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকানপাট ভাঙচুর এবং বিকালে আহমদিয়াদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেদিন শহরের মসজিদ পাড়া মহল্লার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুর রহমান এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান নিহত হন বলে পুলিশ জানায়।

এদিকে শনিবার রাতেও ‘দুই জনকে গলা কেটে হত্যা করার’ গুজব ছড়িয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এসব ঘটনায় মোট তিনটি মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার ব্যক্তিকে। রোববার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৪ জনকে।

গুজব ছড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই জন। এদের একজন পৌর যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফজলে রাব্বী।

পঞ্চগড়ে যা ঘটেছে, তার দায় সরকারের ওপর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, “শুধুমাত্র জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য, অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্য এই ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন নস্যাৎ করতে চায়।”

“এই যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি করা, বিভেদ সৃষ্টি করা– এটা সরকার সৃষ্টি করছে। আমরা মনে করি তারা অত্যন্ত অসৎ উদ্দেশ্যে করছে।”

এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা পুরো দেশে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারার মধ্যে আছে। সাম্প্রদায়িক যে উগ্র গোষ্ঠীকে নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করে, তারা নানা ধরনের ঘটনা ঘটানো চেষ্টা করে। পঞ্চগড়ের ঘটনাও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড, সীতাকুণ্ডে ও ঢাকার সায়েন্স ল্যাবে বিস্ফোরণের ঘটনাতেও বিএনপি মহাসচিব সরকারকে দায়ী করেছেন- এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, “রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে আমাদের সরকার। তাদের চিকিৎসা, খাদ্য, শিক্ষা সবকিছুই আমাদের সরকার ব্যবস্থা করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘটনাটি তদন্তাধীন। এটি নাশকতা কিনা এবং এটি সার্বিকভাবে দেশের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টার অংশ কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

“সায়েন্স ল্যাব এবং সীতাকুণ্ডের ঘটনাগুলো দুর্ঘটনা। মির্জা ফখরুল সাহেবের বক্তব্যে মনে হচ্ছে - কারো চুলায় আগুন লাগল, আর ক’দিন পরে বলল যে এ জন্য সরকার দায়ী - বিষয়টা তো তা নয়, এটা দুর্ঘটনা। তবে এই দুর্ঘটনা অবশ্যই অনভিপ্রেত, দুঃখজনক। এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।”

ফটোজার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে এদিন মতবিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে ফটোজার্নালিজম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। পৃথিবীতে বহু কালজয়ী বিখ্যাত ফটোজার্নালিস্ট আছে। আমাদের দেশেও মুক্তিযুদ্ধের যে ছবিগুলো এখন আমরা দেখতে পাই সেগুলো ফটোজার্নালিস্টদেরই তোলা।

“ভারত ভাগের সময় যে আন্দোলন-সংগ্রামের ছবি সেগুলোও ফটোজার্নালিস্টদের তোলা। ফটোজার্নালিস্টরা সমসাময়িক কালকে ধারণ করে, ইতিহাসকে ধারণ করে। এমন ছবি আছে, যেগুলো পৃথিবীকে ভাবায়, মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ফটোজার্নালিস্টদের তোলা বহু ছবি ইতিহাস ও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং আমাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। সিরিয়ার উপকূলে শরণার্থী একটা ছেলের লাশের ছবি সমগ্র পৃথিবীকে ভাবিয়ে তুলেছে।

“যখন কোনো দৈব-দুর্বিপাক হয় তখন ফটোজার্নালিস্টরা সেখানে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তোলে। অনেক সময় একটা ছবির জন্য অনেক ক্ষণ, অনেক দিন, অনেক মাস অপেক্ষা করতে হয়, এমন ঘটনাও আছে। ফটোজার্নালিস্টদের কাজটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম কাজ।”

নিজ উপজেলায় স্মার্ট কার্ডে কৃষি ঋণ উদ্বোধন

চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদ এদিন নিজ উপজেলা রাঙ্গুনিয়ায় এবি ব্যাংকের স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ উদ্বোধন করেন।

সচিবালয়ে নিজ দপ্তর থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাঙ্গুনিয়ায় এবি ব্যাংক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন তিনি।

এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সজল কুমার তালুকদার, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতি প্রমুখ রাঙ্গুনিয়া প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণের উদ্যোগের প্রশংসা করে হাছান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশে এখনও ৭০ ভাগ মানুষ গ্রামেই বসবাস করে। জিডিপিতে যদিওবা শিল্পখাতের অবদান কৃষিকে ছাড়িয়ে গেছে তবুও এখনও দেশের ৭০ ভাগ বা তার চেয়েও বেশি মানুষ নানাভাবে কৃষির এবং কৃষি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। এ জন্য স্মার্ট কার্ডে কৃষি ঋণদান অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ।”