নানা নাটকীয়তার মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটে জয়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথও নিয়েছেন নাটকীয়ভাবে।
Published : 11 Jan 2014, 10:58 AM
নির্বাচনের বর্জনের ঘোষণা দিয়ে হাসপাতালে থাকা এরশাদ শনিবার আকস্মিকভাবেই সংসদ ভবনে উপস্থিত হয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন।
গত বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত আওয়ামী লীগের নাজমুল হাসান এবং জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমানের শপথের প্রস্তুতি ছিল সংসদ ভবনে।
তবে দুপুরের আগে সেখানে গিয়ে এরশাদেরও আসার গুঞ্জন শোনা যায়; দলীয় চেয়ারপারসন যে কোনো সময়ে শপথ নেবেন বলে জাতীয় পার্টির নেতারা বলে এলেও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলছিলেন না।
এমনকি বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে শপথ নেয়ার পর এরশাদের স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন এরশাদও সাংবাদিকদের বলেন, “চেয়ারম্যানের কথা চেয়ারম্যানকেই জিজ্ঞাসা করুন।”
বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ধোঁয়াশাময় চরিত্র এরশাদ বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে হাজির হন সংসদ ভবনে। সরাসরি তিনি ঢুকে যান স্পিকারের কক্ষে।
অন্য সংসদ সদস্যরা যে পথে আসেন, সেই পথে আসেননি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। তিনি সংসদ ভবনে ঢোকেন গণভবনের বিপরীত দিকের প্রবেশপথ দিয়ে, যেদিক দিয়ে সাধারণত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ উপনেতা ঢোকেন।
স্পিকারের কক্ষে যখন এরশাদ ঢোকেন, তখন সেখানে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের থাকার কড়াকড়ি ছিল। তবে এই কড়াকড়ির মধ্যেই শপথ অনুষ্ঠানের সাক্ষী হন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক।
স্যুটপরা এরশাদকে স্পিকারের কক্ষে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। তিনি কক্ষে ঢুকেই তিনি শিরীন শারমিনকে সালাম দেন। এরপর শপথ নেন।
সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শপথ নিতে ঢোকার পর স্পিকার হাসতে হাসতে এরশাদকে জিজ্ঞেস করেন- ‘আপনি আসলেন’।
“এরশাদ বলেন, ‘রংপুরের মানুষ ভোট দিয়েছে। আসতে হল’।”
স্পিকারের কক্ষ থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ঢোকেন সংসদ সচিবের কক্ষে। সেখানে শপথনামায় স্বাক্ষরের পর বেলা সোয়া ১২টার দিকে সংসদ ভবন ছাড়েন তিনি।
যে পথে এসেছিলেন, সেই পথেই সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে সরাসরি সিএমএইচে চলে যান এরশাদ। নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সবার অনেক কৌতূহল থাকলেও এই সময়টাতে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন তিনি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার অবশ্য বলেছেন, এরশাদ শিগগিরই তার ‘মনের কথা’ প্রকাশ্যে বলবেন।
নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত, এরপর নির্বাচনের যাওয়ার ঘোষণা, মনোয়নপত্র দাখিলের পর আবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে র্যাব পাহারায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সরাসরি এরশাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এর মধ্যেই জাতীয় পার্টি থেকে রংপুর-৩ আসনে ভোটে বিজয়ী হন এরশাদ, তবে লালমনিরহাটের আসনে হারেন তিনি। লালমনিরহাটের আরেকটি আসনে হারেন এরশাদের ভাই মন্ত্রী জি এম কাদেরও।
৫ জানুয়ারির ভোটে ১৩ জন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২০ জনকে নিয়ে বিএনপিবিহীন দশম সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জাতীয় পার্টি।
এরশাদের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী রওশনকে সংসদীয় দলের প্রধান নির্বাচিত করে তাকে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পথও তৈরি করে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
শনিবার এরশাদের শপথের পরপরই স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় পার্টির একদল সংসদ সদস্য। ওই দলে থাকা মুজিবুল হক চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রওশনকে যে তারা জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারকে জানানো হয়েছে।
জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অংশীদারও হতে চাইছে। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দলের বৈঠকেই হবে বলে জানিয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।
দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ২৮৪ জন গত বৃহস্পতিবার শপথ নেন। তবে পাঁচজন সেদিন নেননি, তাদের মধ্যে এরশাদসহ এই চারজন ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের ছেলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে।চট্টগ্রাম-৮ আসনে নির্বাচিত হন জাসদের কার্যকরি সভাপতি বাদল।
দেশের বাইরে থাকায় এখনো শপথ নেননি ঢাকা-৯ আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী।