খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নামা বিএনপিকে হুঁশিয়ার করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
Published : 29 Nov 2019, 02:28 PM
সম্প্রতি বিএনপির এক কর্মসূচি থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে শুক্রবার আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলনে বক্তব্যে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
কাদের বলেন, “আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা তারা বলছে। আমরা বারবার বলেছি, উনি আদালতের রায়ে দণ্ডিত, সে কারণে জেলে। আপনারা আইনি লড়াই করে তাকে মুক্ত করুন। এতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।
“কিন্তু বিএনপি আদালত মানে না, আইনের শাসন মানে না, বিচার মানে না। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতের উপর চাপ দিতে সেখানে ভাংচুর করেছে। তারা পুলিশের উপর হামলা করেছে। আদালত প্রাঙ্গণকে রণাঙ্গনে পরিণত করেছে।”
বিএনপিকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গণতান্ত্রিক পথে, রাজনৈতিকভাবে আমরা মোকাবেলা করব।
“কিন্তু আপনারা যদি মনে করে সহিংসতা সৃষ্টি করে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবেন, তাহলে আপনারা বোকার স্বর্গে আছেন। আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হলে সমুচিৎ জবাব দেওয়া হবে।”
দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “সবাই প্রস্তুত হয়ে যান, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে, এখনও চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয় সরকারকে হটানোর চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত রুখতে হবে।”
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দেশের উন্নয়ন দেখে বিএনপি তা ব্যাহত করতে চাইছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “দেশে এত উন্নয়ন, এত অর্জন, বিএনপি এবং তার দোসররা উন্নয়ন দেখে না। তারা চোখে কালো চশমা পরেছে। কালো চশমা দিয়ে তারা উন্নয়ন দেখতে পায় না।
“জনগণ তাদের (বিএনপি) চায় না, আন্দোলন করতে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ। এখন তাদের অবলম্বন হচ্ছে প্রেস ব্রিফিং, তাদের অবলম্বন নালিশ। এখন দেশে ঠাঁই না পেয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ আর দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছে।”
ঢাকার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে মৎসজীবী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের।
মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার মতোই। সারাদেশ থেকে প্রতিনিধিরা এসেছেন এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা আমি আমাদের নেত্রী আমাদের সকলের অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে জানিয়েছি।
“আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি মৎস্যজীবী লীগকে আগামী দিনে আরও শক্তিশালী করবে, আরও গতিশীল করবে, আরও প্রাণবন্ত করবে।”
মৎস্যজীবী লীগের নেতৃত্ব প্রকৃত মৎস্যজীবীদের হাতে থাকার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো চাঁদাবাজের দোকান আমরা চাই না। মৎস্যজীবীদের সাথে সম্পর্ক নেই, ঢাকায় বসে বসে একটা কার্ড বানিয়ে জায়গায় জায়গায় দিয়ে চাঁদাবাজি করবে, এমন নেতা আমাদের দরকার নেই।
“দেখলাম যে মৎস্য উৎপাদনে আমরা তৃতীয় স্থানে। কাজেই এখানে একটা সুন্দর ভালো ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব দরকার।”
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নারায়ণ চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
সাইফুর সভাপতি, আজগর সম্পাদক
মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলনে সাইফুর রহমান সভাপতি এবং শেখ আজগর লস্কর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনেই কাউন্সিল অধিবেশন বসে। সেখানে নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নতুন কমিটিতে কার্যকরী সভাপতি হয়েছেন সাইদুল আলম মানিক। সহ সভাপতি হয়েছেন আবুল বাশার, আব্দুল গফুর, মোহাম্মদ আলম, বাবুল মিয়া, মীর আসাদুজ্জামান, শাহে আলম মিয়া, নাসরিন সুলতানা। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম, টিপু সুলতান, রফিকুল ইসলাম রফিক।
২০০৪ সালের ২২ মে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের অনেক সমমনা সংগঠনের মতোই এটা পরিচালিত হলেও মূল দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল না। যে কারণে চারটি সম্মেলন হলেও তা বলতে গেলে আলোচনাতে ছিল না।
এবারই বড় আকারে সম্মেলন করে সংগঠনটি। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এটি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।