ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনায় সরকার ‘নির্বিকার নেই’ মন্তব্য করে ক্ষতিগ্রস্তদের ‘ভয়কে জয়’ করতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
Published : 04 Nov 2016, 07:08 PM
হিন্দুদের উপর হামলা: মন্ত্রী ছায়েদুলের পদত্যাগ দাবি
শাহবাগে অবরোধ, বিক্ষোভের মুখে হানিফের সংহতি
নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলা: বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি সিপিবির
তিনি বলেছেন, “আমরা নির্বিকার নই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে, যারা এ অপরাধ সংঘটিত করেছে, শাস্তি তাদের পেতেই হবে।”
বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়িঘর-মন্দিরে একের পর এক হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রশাসনের গফিলতির অভিযোগের মধ্যেই শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী কাদেরের এ মন্তব্য আসে।
ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে কাদের বলেন, “আপনারা নিজেদের ‘মাইনরিটি’ ভাববেন না। বাংলাদেশে আপনাদেরও সমান অধিকার। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের লোকজন কেউ ‘মেজরিটি, মাইনরিটি বলে সমান অধিকার পাচ্ছে না।
“সমান অধিকার পাচ্ছে এ দেশের নাগরিক হিসেবে। নিজেদের মাইনরিটি ভাববেন না। মাথা উচুঁ করে বাঁচবেন, মাথা নীচু করবেন না।”
গারোদের ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ানগালা’ উৎসবের উদ্বোধনীতে সংখ্যালঘুদেরকে সাহসের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার আহ্বান জানিয়ে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, “ভয়কে জয় করতে হবে, জীবন হচ্ছে একটা সংগ্রাম।
“যে আকাশে মেঘ নেই সেটা আকাশ নয়, যে নদীতে ঢেউ নেই সেটা নদী নয়, যেখানে গর্জন নেই সেটা সাগর নয়, দুর্যোগ যেখানে নেই সেটা প্রকৃতি নয়। এটাই বৈচিত্র্য, নদীতে ঢেউ থাকবে, সাগরের গর্জন থাকবে, আকাশে মেঘ থাকবে, এই যে বৈচিত্র্য। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের এই বাংলাদেশ।”
সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে সাহসের সঙ্গে জীবনের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার অনুরোধ জানিয়ে তাদের ‘উদ্বেগের কোনো কারণ নেই’ বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আজকে মাইনরিটির উপর কেউ যদি কোনো ধরনের হামলা চালায়, কোনো প্রার্থনালয়ে, তাদের বাড়িতে, মন্দিরে সরকার এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে। তাদেরকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।
“আপনারা ভয়কে জয় করবেন, আপনাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে আছে, আমরা কোনোভাবে আপনাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে দেব না।”
ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
এরমধ্যেই প্রথমবার হামলার পাঁচ দিনের মাথায় পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই শুক্রবার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আবারও আগুন দেওয়া ঘটনা ঘটলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে মিলিত হয়ে মন্ত্রী ছায়েদুলের পদত্যাগ দাবি করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ২০টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঘটনার ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত’ দাবি করেছে সিপিবি।
এছাড়া রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল- আলম হানিফ।
ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ানগালা’ উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি নকমা দুর্জয় তজুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংসদ জুয়েল আরেং, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য রেমন্ড আরেং।