টিকটকে ভিডিও বানিয়ে আলোচিত নোয়াখালীর তরুণ ইয়াছিন আরাফাত অপুকে নিয়ে পরিচালক অনন্য মামুন একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে তুমুল সমালোচনা চলছে; তাকে জড়িয়ে বিদ্যমান সমালোচনাকে ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে দেখছেন বলে জানালেন অপু।
Published : 23 Aug 2021, 05:25 PM
শনিবার এক ফেইসবুকে পোস্টে অপুকে নিয়ে ‘সিনিয়র ভার্সেস জুনিয়র’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন পরিচালক অনন্য মামুন; কলেজ পড়ুয়াদের গল্পে নির্মিতব্য এ সিরিজে শিক্ষার্থীদের একটি দলের প্রধানের ভূমিকায় অভিনয় করছেন অপু।
পরিচালকের ঘোষণার পরপরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ফেইসবুকে অনেকের বিদ্রুপের কবলে পড়েছেন অপু; টিকটকার পরিচয়ের পাশাপাশি তার ‘অভিনয়জ্ঞান’ নিয়েও বিদ্রুপ করছেন কেউ কেউ। এমনকি তাকে ওয়েব সিরিজে কেন নির্বাচন করা হল সেই প্রশ্নও ঘুরছে ফেইসবুকে।
অপু বলছেন, তিনি ফেইসবুকে এমন বিদ্রুপ-সমালোচনায় তিনি বিচলিত নন; সমালোচনাকে আশীর্বাদ হিসেবে নিয়ে নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি।
অপু গ্লিটজকে বলেন, “যদি ভালো কিছু করতে চাই, মানুষ সমালোচনা করবেই। যারা আমাকে নিয়ে সমালোচনা করছেন, তাদের আমি অনেক ভালোবাসি। কারণ তারা কিন্তু আমাকে ইগনোর করে না। তারা আমাকে দেখে, আমার কাজগুলো নিয়ে সমালোচনা করে বা কথা বলে-এটাই আমার জন্য অনেক কিছু। এটাকে আমি আশীর্বাদ হিসেবে দেখছি।”
“সন্তানকে পরিবার আদর করে আবার শাসনও করে। আমাকেও একটা সময় শাসন করছে, আবার আদরও করবে। এমন না যে সবসময় শুধু শাসনই করে যাবে। সবাই আমার পাশে থাকলে আমি ভালো কিছু করতে পারব।”
অপুকে ওয়েব সিরিজে নির্বাচনের বিষয়ে পরিচালক অনন্য মামুন জানান, আগের অপুর সঙ্গে এখনকার অপুর আকাশ-পাতাল তফাৎ রয়েছে।
অনন্য মামুন জানান, তার কথা মতো অপু সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে নিজের লুকে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।
“এর চাইতে আর বেশি কিছুর দরকার নাই। ওর উচ্চারণগত একটু সমস্যা আছে। দেখবেন, আমাদের দেশে হাজার তারকা আছেন যারা জীবনে কোনোদিন ডাবিং করেন নাই। আমার একটাই কথা, ছেলেটার চেষ্টা আছে। আমি তার অতীত নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। বর্তমানে ও নিজেকে যেভাবে সংশোধন করছে-সেই চেষ্টাটাকে আমি সাপোর্ট করি।”
২০ সেপ্টেম্বর থেকে ‘সিনিয়র ভার্সেন জুনিয়র’র দৃশ্যধারণ শুরু হবে; এর আগে অভিনয়ে নিজেকে শাণিত করতে এক মাসের কর্মশালায় অংশ নিচ্ছেন অপু।
অপু বলেন, “ভাইয়া (অনন্য মামুন) আমাকে যথেষ্ট পরিমাণে সাপোর্ট করছেন। ভালো কিছুই হবে আশা করছি। আমার যেগুলো প্রবলেম আছে, সেগুলোর সবকিছুই ঠিক করে দিচ্ছেন তিনি। আমি গ্রুমিং করছি। সবার সহযোগিতায় ভালো একজন আর্টিস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখি।”
বন্ধুদের দেখে উৎসাহিত হয়ে কয়েক বছর আগে টিকটকে ভিডিও বানানো শুরু করেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির ছেলে অপু; অল্প সময়ের ব্যবধানে তার ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে; বেশ পরিচিতিও পেয়েছেন।
পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই অপুকে ওয়েব সিরিজের কাজে নেওয়ার ঘটনায় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউ ফেইসবুকে লিখেছেন, নানা ত্যাগ-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর ধরে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মূল্যায়ন করছেন না পরিচালকরা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের সঙ্কটের কথাও তুলে ধরেছেন কেউ কেউ।
বিষয়টি নিয়ে অনন্য মামুন বলেন, “আমি নিজেও একটার থিয়েটারর্মী। ১২ বছর বয়স থেকে বগুড়ায় থিয়েটার করেছি। বিষয়টা হচ্ছে, আপনি থিয়েটার করতে পারেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ জন শিক্ষার্থীই কি জীবনে চূড়ান্ত সাফল্য পেতে পারে? লাকের ব্যাপার আছে, সঙ্গে পাবলিক কমিউনিকেশনের একটা ব্যাপার আছে।
“অনেকে স্ট্যাটাসে আবেগপ্রবণ হয়ে গেছে; তাদের অনেককে আমি চিনি না, জানিও না। ব্যাপারটা এরকম না যে, কোথাও দশজন কাজ করছে সেখানে গিয়ে বলব, ‘আসো তোমাদের কাজ দিই’। পাবলিক কমিউনিকেশনটা তো করতে হবে। হতাশ হওয়ার কিছু নাই।”
এর আগে আদনান আল রাজীবের ওয়েব চলচ্চিত্র ‘ইউটিউমার’র একটি ছোট চরিত্রে দেখা গেছে অপুকে। তিনি বর্তমানে ঢাকায় থাকেন।
গত বছরের অগাস্টে সড়কে এক পথচারীকে মারধরের মামলায় অপুকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।