চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ শতাংশ বেড়েছে।
Published : 02 Oct 2014, 04:57 PM
২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রবাসীরা প্রায় ৪০০ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩২৭ কোটি ডলার।
কোরবানির ঈদের আগে সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৮ শতাংশেরও বেশি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১০২ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের বিপরীতে এই সেপ্টেম্বরে ১৩১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক মাসে এতো বেশি প্রবৃদ্ধি আর কখনই হয়নি।
রেমিটেন্স বৃদ্ধির এই ধারা আগামী মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
এদিকে রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) ফের ২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
কাজী ছাইদুর বলেন, “অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রেমিটেন্স প্রবাহে এই প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ভালো উদ্বৃত্ত ধরে রাখতেও সহায়তা করবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৩৯৮ দশমিক ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। গত অর্থবছরের (২০১৩-১৪) একই সময়ে এসেছিল ৩২৭ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
ম্যানিলাভিত্তিক এই সংস্থাটির ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৪’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ রেমিটেন্স কম এসেছিল।
২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এডিবি বলেছে, “এবার ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।”
কম খরচে বিদেশে লোক পাঠানোর ইতিবাচক প্রভাব চলতি অর্থবছরের রেমিটেন্স প্রবাহে পড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে ঈদুল ফিতরের আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ১৪৯ কোটি ১৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক মাসের হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। অগাস্টে রেমিটেন্স এসেছে ১১৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে সব মিলিয়ে এক হাজার ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ (১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে এক দশমিক ৬ শতাংশ কম।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ।
রিজার্ভ ফের ২২ বিলিয়ন ডলার
রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও (রিজার্ভ) বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ বিলিয়ন (দুই হাজার ২০০ কোটি) ডলার।
এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাত মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব বলে জানান ছাইদুর রহমান।
গত ৭ অগাস্ট প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার মজুদ ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-অগাস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ।
২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তা ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।