বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থবছর শুরু করেছে বাংলাদেশ, যা বছরের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।
Published : 16 Sep 2019, 09:26 PM
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ডলার।
গত অর্থবছরের জুলাই মাসে উদ্বৃত্তের বদলে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল।
চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর।
জুলাইয়ে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে (ওভারওল ব্যালান্স) উদ্বৃত্ত হয়েছে ১২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এই লেনদেনে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।
সবমিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুটা সরকারের জন্য ‘স্বস্তি’র হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষক জায়েদ বখত।
তবে এক মাসের তথ্য দিয়ে লেনদেন ভারসাম্যের গতি বোঝা যাবে না জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদনে গত কয়েক বছরের সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকলে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে রাখা সম্ভব। আর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও সহসা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কোনো আভাস না থাকায় পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনুকূলে থাকবে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
“বিআইডিএসের এই গবেষকের ধারণা আমেরিকা-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা আছে। তবে সেটা আমাদের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে না।”
“এসব বিবেচনায় আমদানি ব্যয় খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে চলতি অর্থবছর শেষে লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ধরে রাখা সম্ভব,” বলেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে
লেনদেন ভারসাম্যে ‘স্বস্তি ‘ ফিরে আসায় পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতিও কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই মাসে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১১৬ কোটি ডলার।
আর গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার কোটি ডলার।
এ হিসাবেই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৪৯ কোটি কো৪০ লাখ (১৫.৪৯ বিলিয়ন) ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল আরও বেশি ১৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।
তবে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কিছুটা বেড়েছে। জুলাই মাসে এ খাতের ঘাটতি ছিল ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে ঘাটতি ছিল ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
এফডিআই বেড়েছে
গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গত বছরের জুলাই মাসে ৩৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছে বাংলাদেশে। এই বছরের জুলাইয়ে এসেছে ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
এ হিসাবে এই এক মাসে এফডিআই বেড়েছে ৭ শতাংশ।
এই মাসে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ২০ কোটি ডলার। আগের বছরে একই মাসে এসেছিল ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
এ হিসাবে নিট এফডিআইতেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়ে থাকে।
পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে
তবে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) একেবারেই কমে এসেছে। গত বছরের জুলাইয়ে পুঁজিবাজারে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছিল। এই বছরের জুলাইয়ে এসেছে ৭০ লাখ ডলার।
জুলাই মাসে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।