উচ্চাভিলাষী বলে সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেটকে জাতির জনকের স্বপ্নপূরণের অভিযাত্রায় একটি মাইলফলক বলে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Published : 29 Jun 2016, 04:05 PM
প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ ধরে গত ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন মুহিত।
মাসব্যাপী আলোচনার পর আগামী বছর ওই পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের প্রস্তাব বা অর্থবিল বুধবার পাসের আগে সংসদে বক্তৃতায় তিনি বলেন, “বাজেটে আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং এসডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বিস্তারিত কর্মকৌশল সন্নিবেশিত করেছি।
“প্রস্তাবিত এ বাজেট হচ্ছে উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনের মাধ্যমে জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে আমাদের পথচলার ক্ষেত্রে আরও একটি মাইলফলক।”
দ্বিধা ও সংশয় পেছনে ফেলে এ বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় গতিশীলতা সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণ ছাড়া বাজেটের স্বার্থক বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়।
সাত দশমিক দুই শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাজস্ব আয়ের উপর নির্ভর করে নতুন অর্থবছরের বাজেট সাজিয়েছেন মুহিত, যাকে উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে সমালোচনা উঠেছে।
‘উচ্চাভিলাষী’ বলে সমালোচনাটি নতুন নয় মন্তব্য করে টানা অষ্টমবার জাতীয় বাজেট প্রস্তাবকারী মুহিত বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে হতে বাজেটের আকার ক্রমে বাড়াতে হবে। ফলে বাজেট কিছুটা উচ্চাভিলাষী হবে সেটাই স্বাভাবিক।
এডিপি বাস্তবায়ন এবং বিদেশি অর্থ সহায়তা ব্যবহারের সক্ষমতা নিয়ে অনেকের সংশয়ের জবাবে তিনি সরকারের দু’মেয়াদে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার দিকে দৃষ্টি ফেরাতে বলেন।
বাজেট নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সমালোচনাগুলোকে স্বাগত জানালেও ঢালাও কিছু অভিযোগ নিয়ে দুঃখ পাওয়ার চেয়ে বেশি ‘বিস্মিত’ হয়েছেন বলে জানান মুহিত।
বক্তব্যে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নিয়ে আগের মতোই হতাশা প্রকাশ করে তিনি এক্ষেত্রে এখনও অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকার কথা স্বীকার করেন।
এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহের অভাব, ভূমির স্বল্পতা ও যোগাযোগ অবকাঠামোর অপ্রতুলতাকে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, এসব বাধা দূর করতে গৃহিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারলে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে গতিশীলতা আসবে।
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশে নির্ধারণে বিভিন্ন মহলের সংশয়ের জবাবে মুহিত বলেন, বর্তমানে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূচকে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পূর্বাভাস দিচ্ছে।
“বিশেষ করে ব্যক্তিখাতে ঋণ সরবরাহ, আমদানি, রপ্তানি, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তি, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ, প্রবাস নিয়োগ, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।”
এপ্রিল মাসে ব্যক্তিখাতে ঋণ সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ, যা নিট রপ্তানি চ্যানেলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী মুহিত।
“এসব বিবেচনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”