আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট যাতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নির্ভর না হয় সে সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
Published : 26 May 2016, 12:18 AM
আগামী জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে তা সমাধানের জন্য আগামী দুই থেকে তিন বছরে ক্রমান্বয়ে মূসক আইন বাস্তবায়ন করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৫-১৬: তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজের মতামত তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আগামী বাজেট যেন ভ্যাটনির্ভর না হয়। আয়করের উপর জোর দিতে হবে। কেননা, আয়কর একটি প্রত্যক্ষ কর। যারা সামর্থ্যবান তারাই শুধু আয়কর দেয়। ভ্যাট হচ্ছে পরোক্ষ কর। যা জনসাধারণ দিয়ে থাকে।”
নতুন ভ্যাট আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগামী দুই থেকে তিন বছরে ক্রমান্বয়ে এই আইন বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা যাতে উপকরণ রেয়াত নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে পণ্যের ওপর তা বিক্রয় কর (সেলস ট্যাক্স) হয়ে যাবে।”
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবসম্মতভাবে বাস্তবায়নের জন্য দুই থেকে তিন বছরের পরিকল্পনা করার সুপারিশ করেন এই গবেষক।
কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব সংগ্রহে ভ্যাটকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। নতুন বাজেটে এ নির্ভরতা আরও বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার মূল বাজেটের মধ্যে ভ্যাট বা মূসক থেকেই সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৬৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে মূসক থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু তা আদায় শুরুর আগেই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ভ্যাট আইন সংশোধনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।
নতুন আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ৩০ মে সারা দেশে ১ ঘন্টা (দুপুর ১২টা থেকে ১টা) দোকানপাট বন্ধ রাখারও ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোক্তাপর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির উদাহরণ দিয়ে সিপিডি বলছে, নতুন মূসক আইন বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ বিলের ওপর ভোক্তাদের ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ মূসক দিতে হবে। আবার লোহা বা রডের ওপর মূসক বাড়লে তা অবকাঠামো তৈরির প্রকল্পে খরচ বাড়াবে।
সিপিডি আরও বলছে, নতুন মূসক আইনে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল, অর্থ পরিশোধ, নিবন্ধন নেওয়া যাবে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না।
সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এই নীতি (ভ্যাট) প্রচলনের পক্ষে। তবে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যে ঐকমত্য হচ্ছে না, প্রকাশ্যে বিরোধিতা হচ্ছে; তার সমাধান না হলে এ আইন বাস্তবায়ন কঠিন হবে।”
আইনটি সফলভাবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।
নতুন ভ্যাট আইন ২০১২ সালে সংসদে পাস হওয়ার পর এই বছরের ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা, যাতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্দিষ্ট রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলে আসছিলেন, আগামী মাসের ১ তারিখ থেকেই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কর আদায় করা হবে।
এর আগে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রির উপর নির্দিষ্ট হারে ভ্যাট না দিয়ে এককালীন একটি অঙ্ক ভ্যাট হিসেবে রাজস্ব বিভাগে জমা দিত।
১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়বেন দাবি করে আগের মতো ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ চালুর দাবি করে আসছেন তারা।