বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বড় ধরনের উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
Published : 06 May 2016, 11:04 AM
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ২৯৩ কোটি ৩০ লাখ (২.৯৩ বিলিয়ন) ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ২৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে শেষ পর্যন্ত ১৬৫ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল ওই অর্থবছর।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের পড়তি দামের সঙ্গে খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় কমতে থাকায় ঘাটতি বাণিজ্যের বাংলাদেশে এই উদ্বৃত্তের দেখা মিলছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন এবং অগ্রগতি সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন গত ২৭ এপ্রিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন, তাতে বলা হয়েছে- বাণিজ্যের ভারসাম্য ও প্রাথমিক আয়ের হিসাবে ঘাটতি থাকলেও ‘সেকেন্ডারি আয়ের’ হিসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্বৃত্ত থাকায় চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্ত থাকছে।
“অন্যদিকে মূলধন ও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকায় সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যও অনুকূলে রয়েছে।”
এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলেন মুহিত।
# জুলাই-মার্চ সময়ে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৩৬১ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি।
# এই নয় মাসে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ১৬২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ কম।
# ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এই সময়ে তেল আমদানির জন্য ২৭২ কোটি ১৩ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
# এবার জুলাই-মার্চ সময়ে খাদ্যপণ্য (চাল ও গম) আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
# শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি বেড়েছে ৩ শতাংশ।
# জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেড়েছে।
# একই সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমেছে প্রায় আড়াই শতাংশ।
বৃহস্পতিবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ প্রায় ২৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে ‘স্থির’ রয়েছে।
প্রতি মাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে হাতে থাকা এই রিজার্ভ দিয়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ছিল দুই হাজার ৯২২ কোটি (২৯ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার, যা ছিল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৃহস্পতিবার আকুর মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ৯০ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ২৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
অর্থবছরের বাকি তিন মাসেও (এপ্রিল, মে ও জুন) বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে এখনকার সুবাতাস বজায় থাকবে বলে আশা করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান- বিআইডিএসের এই গবেষক বলেন, “বিশ্ববাজারে জ্বলানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম কমায় বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমেছে। পাশাপাশি বেড়েছে রপ্তানি আয়। এ কারণেই ‘স্বস্তিদায়ক’ এই উদ্বৃত্তি।”
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সহসা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আভাস না থাকায় পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনুকূলে থাকবে বলেই তার ধারণা।
“অর্থবছরের বাকি সময় আমদানি ব্যয় খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে চলতি অর্থবছর শেষেও লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।”