টেপা পুতুল, নকশিকাঁথা, শীতলপাটিসহ লোকায়ত ঐতিহ্যের নানা শিল্পকর্মের পসরা সাজিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘জয়নুল উৎসব’।
Published : 29 Dec 2021, 06:00 PM
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষদের বকুলতলায় উৎসবের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। এর আগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সবাই।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনের মেলারও আয়োজন করা হয়েছে চারুকলায়। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা সতরঞ্জি, নকশিকাঁথা, শীতলপাটি, শখের হাঁড়ি, মাটি ও কাঠের পুতুল, কোমর তাঁতের কাপড়, বাঁশি, পাখা, শোলা, শঙ্খ ও পটশিল্পসহ নানা পণ্যে স্টল সাজিয়েছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা শাখায় কর্মরত ইমরান উজ জামানের সংগ্রহে থাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৃৎপাত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে জয়নুল গ্যালারিতে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছর অনুষ্ঠান করতে না পারায় এবার জয়নুল উৎসবে ২০২০ সালের জন্য জাপানের শিল্পী শিরোকি তুসিউকি এবং বাংলাদেশের আবুল বারক আলভীকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
চিত্রশিল্পী আলভী বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতিকে বুঝতে এবং ধর্মান্ধতা ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এমন উৎসব তরুণ প্রজন্মকে পথ দেখাবে। বাঙালি তার ঐতিহ্য ও লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়বে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
ঢাকায় আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ববাংলায় শিল্প শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু চেষ্টার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে শিল্পাচার্য অভিধা দেওয়া হয়। উদ্বোনী অনুষ্ঠানে সে অবদানের কথা তুলে ধরেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ।
তিনি বলেন, “তার অনবদ্য সৃষ্টি এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতীয় উপমহাদেশে চারুকলা শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। অনাগত ভবিষ্যতের প্রজন্মকেও নানাভাবে অনুপ্রেরণা দিতে থাকবে এই প্রতিষ্ঠান।
১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের কেন্দুয়ায় জয়নুল আবেদিনের জন্ম। ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বেড়ে উঠা জয়নুল তার ভেতরের শিল্পী সত্ত্বা দিয়ে বার বার পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছেন।
বাংলাদেশে আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ বরেণ্য এ শিল্পীর বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে- দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা, নবান্ন, ফসল মাড়াই, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি।
উপাচার্য বলেন, “জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী ও মানবিক চিত্র এঁকে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছেন, যা তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। তার অনন্য অবদানে বাংলাদেশের শিল্পচর্চা আজ ঈর্ষণীয় মানে পৌঁছেছে।”
“বাংলাদশে এই মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে আমাদের শিল্পকলা। বাংলাদেশে সেই শিল্পকর্মের যিনি পথিকৃত, সেই জয়নুল আবেদিনের ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না।”
আরও পড়ুন