অর্থ সংকটে ধুঁকতে থাকা ‘জারা জিন্স’ নামে মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় কার্যত তিন দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন এর একজন মালিক।
Published : 17 Sep 2019, 10:53 PM
বন্ধ হতে চলা এই গার্মেন্টের হাজারখানেক শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে কারাখানা প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন, আর ভেতরে বসেই দিনের পর দিন যাচ্ছে অন্যতম মালিক রিয়াজুল হক রাজুর।
মিরপুর ১ নম্বরে চিড়িয়াখানা সড়কের ১৬ তলা মল্লিক টাওয়ারের চতুর্থ ও পঞ্চম তলাজুড়ে জারা জিন্সের কারাখানা। প্রায় এক হাজার শ্রমিক এই কারখানায় কাজ করতেন।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজন শ্রমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুই মাসের পুরো বেতন ও এক মাসের মূল বেতন দেওয়ার কথা বললেও মালিকপক্ষ সময় ক্ষেপণ করছে। শ্রমিকরা দিনরাত কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থান করে আছেন। মালিকপক্ষের একজনও সেখানে অবস্থান করছেন।
সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে কারখানার চারজন মালিকের তিনজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন ধরেননি।
রিয়াজুল নামের একজন ফোন ধরে বলেন, প্রচণ্ড অসুস্থতার কারণে তিনি কথা বলতে পারছেন না।
টানা কয়েক দিন শ্রমিক বিক্ষোভের পর গত রোববার শ্রমিক, মালিক, পুলিশ ও বিজিএমইএ নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে বেতন-ভাতা পরিশোধের শর্তে বিক্ষোভ থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। এরপর থেকে কারখানায় শ্রমিকদের এই অবস্থানের সঙ্গে সেখানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন পুলিশ সদস্যরাও।
বিজিএমইএর পরিচালক রেজওয়ান সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে থাকা জারা জিন্স-এ গত রোজার ঈদে বেতন নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। সেবার মীমাংসা হওয়ার পর কোরবানির ঈদের সময় আবার সমস্যা দেখা দেয়। ব্যাংক থেকে ৭০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েও তারা সব বেতন পরিশোধ করতে পারেনি।
“শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে কারখানাটির দেড় কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই টাকা এখনও তারা জোগাড় করতে পারেনি। মেশিনারিজ বিক্রি বাবদ এক কোটি ১৮ লাখ টাকার মতো জোগাড় হচ্ছে বলে শুনতে পেয়েছি।”
ওই কারখানার কয়েকজন কর্মী জানান, ২০১১ সালে কারখানা স্থাপনের পর ২০১৬ পর্যন্ত ভালোই ব্যবসা করছিল জারা জিন্স।
এরপর একজন ভারতীয় ক্রেতা ২০১৬ সালে ৬৩ হাজার প্যান্ট তৈরির পর তা না নিয়ে চম্পট দিলে সমস্যা শুরু হয় বলে কারখানাটির স্টোর রুমে কর্মরত একজন জানান।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় এক বছর স্টোরে পড়ে থাকার পর ওই পণ্য শেষ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। একই বছর ওই ক্রেতার ক্রয়াদেশের ভিত্তিতে এক লাখ ২৫ হাজার প্যান্ট তৈরির জন্য চীন থেকে আনা হয় ফেব্রিক্স। সেই আদেশও বাতিল হয়ে যায়।
“এই দুই ঘটনায় লাখ লাখ টাকা লোকসান হওয়ার পর কারখানাটির ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।”
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে কাজের অর্ডার কমে আসায় প্রায়ই শ্রমিকদের ‘অলস সময় পার করতে হয়েছে’ বলে জানান কারখানাটির মধ্যম পর্যায়ের এই কর্মী।
তবে তার সঙ্গে দ্বিমত করে কয়েকজন শ্রমিক জানান, তারা কখনও কর্মহীন ছিলেন না। কারখানায় সাব কন্টাক্টের ভিত্তিতে নিয়মিত কাজ চলছিল, তারা ওভার টাইম ডিউটিও করছিলেন।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন সময় লোকসানের কথা বলে মালিকরা কারখানা বন্ধ করলেও বাস্তব চিত্র তেমনটি হয় না। তারা ঢাকার বাইরে কারখানা স্থানান্তরের অংশ হিসাবেই এমনটি করে থাকেন। জারা জিন্সের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।