Published : 11 Dec 2017, 06:42 AM
লেখাটা আসলে কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। ভাবছি অল্প কয়েক লাইনের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে লিখতে পারবো তো? শুরুতেই সবার কাছে অনুরোধ থাকবে লেখাটা একটু বড় হয়ে গেলেও অনুগ্রহ করে পুরোটা পড়বেন। কারণ আমি যার সম্পর্কে লিখতে বসেছি তার সাথে আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বললেই বুঝতে পারবেন কেন লেখাটি পড়া উচিৎ।
টকবগে এক যুবক, যার কোমর থেকে নিচের অংশ পুরোটাই অবশ। আমি যেদিন প্রথম তাকে দেখতে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম, সেদিন তার ঘরে ঢুকতেই দেখলাম সে হুইল চেয়ায়ে বসে আছে, তার মুখে মায়াবী এক হাসি। পায়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম তার পায়ে জুতা পরা। পায়ে জুতা দেখে মনে হলো পা দুটো বোধহয় দেখতে খারাপ লাগে, সেজন্যে জুতো পড়ে আছে। আমি একথা ভাবতে ভাবতেই যুবকটি আমাকে যা বলল, তা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই! সে বলল ভাইয়া, আমার পায়ের দুটো আঙুল গতরাতে ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে! প্রদুত্তরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি টের পাননি? সে স্ফীত হেসে উত্তর দিলো, ভাইয়া– আমার কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত কিছুই টের পাই না আমি। সকালবেলা আমার মা দেখতে পান, আমার দুটো আঙুল ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে! এই হলো তার জীবন!
ঢাকার অদূরে সাভার নয়ারহাট বাজার পেরিয়ে বংশাই নদীর কোল ঘেঁষে একটি গ্রাম চাকল গ্রাম। সে গ্রামের মৃত হাজী মুহাম্মাদ আক্কাস এর ছেলে মহসিন কবীর। বাবা মারা গেছেন পাঁচ-ছয় বছর আগে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে মহসিন ছোট। সমাজে আর দশটা মানুষের মতো মহসিনও ছিল দুর্দান্ত, প্রাণোচ্ছল, এক স্বপ্ন বিভোর মানুষ। কিন্তু নিয়তির করুণ পরিণতি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় বিগত বারোটি বছর ধরে মহসিনের সব স্বপ্ন, আশা, মুখ থুবড়ে পড়ে আছে তার হুইল চেয়ারে।
২০০৫ সালের ৩রা মার্চ, প্রতিদিনের মতো মহসিন তার মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয় সকাল বেলা। এমন না যে– সে বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালাচ্ছিল, তারপরও দূর্ঘটনাবশত হঠাৎ করেই তার মোটর সাইকেলটি উল্টে যায়, আর সে ছিটকে গিয়ে পড়ে পাশের ধানক্ষেতে। মোটর সাইকেলটি উল্টে গিয়ে পর পর কয়েকটি আঘাত করে মহসিনের কোমরের উপর। সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মহসিন। মহসিনের যখন জ্ঞান ফিরে, তখন সে হাসপাতালের বিছানায়। সে বুঝতে পারে যে তার কোমরের নিচ থেকে পুরোটাই অবশ হয়ে গেছে। ডাক্তার তাকে কিছু না বললেও তার বাবাকে জানিয়ে দেন যে তার স্পাইনাল কর্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা কখনও ঠিক হবার নয়।
মহসিন আর কোনোদিন চলাফেরা করতে পারবে না। যদিও সে এটা জেনেছিল অনেক পরে। প্রথম প্রথম সে ভাবতো হয়তো কিছুদিন পরেই আবার স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবে। তাই নতুন করে আশায় বুক বাধতো। কিন্তু যখন সে জানতে পারে, সে আর কোনোদিন চলাফেরা করতে পারবে না, সেদিন থেকেই তার সকল স্বপ্ন হুইল চেয়ারেই বন্দী। স্বপ্নতো দূর, মহসিন এখন প্রতিটি ক্ষণ পার করে শুধু মৃত্যুকে ভেবে ভেবে। সে ভাবে কখন সে মুক্তি পাবে, আর পাখি হয়ে আকাশে উড়বে!
মহসিনের বাবা, ছেলের চিকিৎসা করাতে কোন কৃপণতা করেননি। একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্যে তার বাবা নিজের বাড়ির জমিটুকুনও বিক্রি করে দিয়েছেন। বাড়িটি ছিল ৮ শতক জমির উপর, মহসিনের চিকিৎসার জন্যে তার বাবা ২ শতাংশ জমি তার মামার কাছে বিক্রি করেন, আর চার শতাংশ জমি তার বোন জামাইকে অনুনয় বিনয় করে চার লাখ টাকার বিনিময়ে দেন। কারণ বাহিরের মানুষের কাছে বিক্রি করলে তারা তাদের মতো করে বাড়িঘর নির্মাণ করবে, তখন তাদের এই বাড়ীতে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তাই তার বোন জামাইকেই নামমাত্র দামে জমিটুকুন দিয়ে দেন। যদিও যতদিন মহসীন জীবিত আছে ততদিন তার মামা এবং বোন জামাই এই জমির উপর কিছুই নির্মাণ করবে না বলে জানায় এবং ঐ জমির উপরে এখন যে ঘর আছে ঐ ঘর থেকে যে ভাড়া আসে তা মহসিন এর জন্যই থাকবে।
এভাবেই চলতে থাকে সবকিছু। এর মধ্যে ২০১১ সালে মহসিন তার বাবাকে হারায়। এরপর থেকে তার জীবন যুদ্ধের পরীক্ষা আস্তে আস্তে আরও কঠিন হতে থাকে। তার বাবা মারা যাবার পর থেকে একমাত্র মানুষের সাহায্য ছাড়া তার দ্বিতীয় আয়ের কোন উৎস নেই। সারাক্ষণ হুইল চেয়ারে বসে থেকে তার শরীরের পেছনের অংশে বড় বড় ঘা হয়ে যায় এবং তাতে পচন ধরে মাংস বেরিয়ে এসেছে। আজ পর্যন্ত সে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি, কারণ একসাথে চিকিৎসা করার মতো টাকা সে কখনোই জোগাড় করতে পারেনি। অনেকেই বিভিন্ন সময়ে এগিয়ে এসেছে তার সাহায্যার্থে কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেউই পর্যাপ্ত সাহায্য করতে পারেনি। তার ঘা গুলো ভয়ংকর রূপ নিয়েছে যা দেখার সাহসও হয়তো সবার হবে না। যদি কেউ সাহস করে দেখতে চান এই https://goo.gl/fgxeE5 লিংক থেকে ডাউনলোড করে দেখতে পারেন। সবার কথা চিন্তা করে ছবিগুলো আমি লেখার মধ্যে যুক্ত করছি না। কারণ এই ছবিগুলা সবাই দেখতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
এই ঘা নিয়েই সে চলছে বছরের পর বছর। এটা কি আদৌ ক্যান্সার এ রূপ নিয়েছে কিনা সেটাও সে পরীক্ষা করে দেখতে পারেনি। মাঝে মাঝেই সে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবার কাছ থেকে সাহায্য ও ধার দেনা করে যে টাকা পাওয়া যায়, সেটা তার ওষুধ খরচের জন্যেও পর্যাপ্ত না। জীবন জীবিকার খরচতো পরের কথা। বছরের পর বছর তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করে ইতিমধ্যে তার মায়ের ঋণ হয়ে গেছে লক্ষাধিক টাকার মতো। এখন যা মহসিনের মা ও ছেলের জীবন আরও দুর্বিসহ করে তুলছে। পাওনাদাররাই বা কতদিন সময় দিবে। এমনকি তার চিকিৎসার জন্যে তার খালার গহনাও বিক্রি করতে হয়েছে তার মা কে।
দুই ভাই-বোনের মধ্যে মহসিন ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে, তার নিজের সংসারেরই অবস্থা ভালো না যে সে ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব নিবে। মহসিনের মা গৃহিণী। মহসিনের ২ শতক জমির উপর দুই রুমের ছোট্ট একটা ঘর যা মা ও ছেলের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই। তার মামা এবং বোন জামাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়া জমির উপরে ঘর থেকে সব মিলিয়ে ঘর ভাড়া হয় ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা। তার মধ্যে গ্যাস বিল, পানির বিল দিয়ে, তার ঔষধ এবং মা ও ছেলের খাবার জোগাড় করতেই অনেক হিমশিম খেতে হয়। যার কারণে প্রতি মাসে ঋণ হচ্ছে, আর তা বেড়েই চলছে।
মহসিনের চিকিৎসার পেছনে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়। আমি যদিও আজ পর্যন্ত আমার কথাটা কোথাও উল্লেখ করিনি কিন্তু সবাই যাতে একটু অনুপ্রাণিত হয়ে মহসিন এর পাশে এগিয়ে আসে শুধু এই কথা ভেবে আমি বলছি। আমি মহসিনকে চিনি এবং জানি। তিন–চার বছর ধরে আমি নিজেই প্রতি মাসে তাকে ৬,০০০ (ছয় হাজার) টাকা করে দেই। মা-ছেলে মিলে এই টাকা আর বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে চলার চেষ্টা করে তারপরও ঋণী হতেই হচ্ছে। এই বয়সে যখন একজন ছেলের তার মায়ের দায়িত্ব নেবার কথা সেই বয়সে সে নিজেই তার মায়ের বোঝা। সে এখন চিন্তা করে তার চিকিৎসা না হোক, দরকার হলে না খেয়ে থাকবে কিন্তু যেকোনো ভাবেই হোক ঋণের টাকা শোধ করতে হবে।
সে যে টাকাটা মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা হিসাবে পায় কয়েক মাস যাবত সেটা দিয়েই তার ঋণ শোধ করে যাচ্ছে। এতে তার চিকিৎসার পুরোপুরিই ব্যাঘাত ঘটছে। সে এখন ঋণ শোধ করতে দিশেহারা হয়ে তার একমাত্র ছোট্ট মাথা গোঁজার ঠাঁই বিক্রি করে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছ। যদিও সে জানে এই বাড়িটি বিক্রি করে দিলে তাকে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে, তারপরও সে ঋণের বোঝা আর নিতে পারছে না। এখন আর তার ঔষধও কিনতে ইচ্ছে করে না, পাওনাদাররা মাঝে মাঝেই তাগাদা দেয় কিন্তু কিছুই করতে পারছে না সে। তার খেটে খাওয়ার মানসিকতা আছে কিন্তু উপায় খুঁজে পায় না। সে কম্পিউটার এর কাজ জানে কিন্তু বেশিক্ষণ বসে বসে কাজ করলে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে বলে তার যেকোন কাজ করাও ঝুঁকিপূর্ণ।
দীর্ঘ সময় মানুষের সাহায্য নিয়ে ঋণ করে মহসিনের চিকিৎসা খরচ বহন করে এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে আশে পাশের সব কিছুই তার প্রতিকুলে চলে যাচ্ছে। সবার কাছেই সে একটা বোঝা হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, একজন মা যখন সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেন সবসময়, সেখানে মহসিনের মা মহসিনের দীর্ঘায়ু কামনা করতেও এখন ভয় পান!
মহসিনের জীবনযাত্রা একটু স্বাভাবিক করতে এবং তাকে সুস্থ করে তুলতে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য। সে এখন তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। আল্লাহর রহমতে আপনাদের সকলের সহযোগিতাই পারে মহসিনকে একটি নিশ্চিন্ত ও সুস্থ জীবন এনে দিতে। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র এক হাজার জন সামর্থ্যবান মানুষ মাত্র এক হাজার টাকা করে দিলেই মহসিন এর জীবনটা অন্যরকম হয়ে যাবে। আপনারা যারা তাকে সহযোগিতা করতে চান তারা সরাসরি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তার সাথে কথা বলতে চাইলে ফোন করতে পারেন তার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে। অথবা সম্ভব হলে একটিবার সরাসরি দেখা করে আসতে পারেন, কথা বলে আসতে পারেন তার সাথে। আমি এতটুকু অবশ্যই বলতে পারি মহসিনের সাথে একটু কথা বললে তার মায়াভরা হাসি মুখটা দেখলে আপনি তাকে সহযোগিতা না করে থাকতেই পারবেন না।
মহসিন এর এখন যে সহযোগিতা প্রয়োজনঃ
১. একটা জেলি ফোম হুইল চেয়ার সিট, যাতে তার ঘা আর না বাড়ে এবং ঘা শুকাতে সহায়ক হয়। এমন একটি ভাল মানের জেলি ফোম হুইল চেয়ার সিট কিনতে লাগবে ১৭,০০০ টাকা।
২. মহসিনের ঋণ হয়ে গেছে প্রায় ৩ লক্ষ আশি হাজার টাকা।
৩. তার দীর্ঘ মেয়াদে ভাল চিকিৎসা দরকার, যার জন্যে আসলে কেমন খরচ হবে এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। যা নির্ভর করছে আসলে ভাল একজন ডাক্তার দেখানোর পরে ডাক্তারের পরামর্শের উপর।
৪. মহসিনকে একটু সুস্থ করতে পারলে তারপর তাকে এমন একটা কিছু করে দেয়া যাতে আর কোনোদিন কারো কাছে হাত পাততে না হয়। যেমন– স্থানীয় বাজারে ভাল একটা স্টেশনারী দোকান অথবা কম্পিউটার সেবা প্রদান করার দোকান করে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু সেটা আসলে পরবর্তী পদক্ষেপ। আপাতত মহসিনকে ঋণমুক্ত করে এবং ভাল চিকিৎসা দিয়ে একটু সুস্থ করতে পারলে তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা করা যেত। আর যেটা সম্পূর্ণই নির্ভর করছে আপনাদের সহযোগিতার উপর।
মহসিনকে সাহায্য পাঠাতে ব্যাংক ইনফর্মেশন এবং বিকাশ নাম্বার বিস্তারিতঃ
ব্যাক্তিগত বিকাশ নাম্বারঃ
01772885548
01814-973071
অথবা
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ পাঠাতে পারেনঃ
Dutch-Bangla Bank Limited
Savar Bazar Branch
Md. Mohasin Kabir
A/c- 137.101.90723
যারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে চান তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ পাঠাতে পারেনঃ
Dutch-Bangla Bank Limited
Savar Bazar Branch
Md. Mohasin Kabir
A/c- 137.101.90723
Swift code- DBBLBDDH
Routing Number – 090264122
যাদের সামান্যটুকু সামর্থ্য আছে তারা দয়া করে মহসিনের পাশে থাকবেন। আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা দয়া করে পোস্টটি শেয়ার এবং লাইক করবেন। কারণ আপনি পোস্টটি শেয়ার এবং লাইক করলে আপনার মাধ্যমে এমন একজন জানবে যার হয়তো সামর্থ্য আছে মহসিনের জন্যে কিছু না কিছু করার।