করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে দরিদ্র মানুষের খাদ্য সামগ্রী দিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে ত্রাণ কমিটি করছে, তা প্রশাসনের কাজে খবরদারি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
Published : 17 Apr 2020, 08:54 PM
শুক্রবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশজুড়ে সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা দিতে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটির কাজ যেন স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী চুরি ও আত্মসাৎসহ বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতি এবং তাতে জনপ্রতিনিধিদের জড়িত থাকার যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে এই দলীয় ত্রাণ কমিটি কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে টিআইবি।
করোনাভাইরাস সঙ্কটে গরিব ও দুস্থ এবং নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণ করছে সরকার। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকেই ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ কমিটি করার নির্দেশ দেন।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এই ত্রাণ কমিটির কাজের বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “নেত্রী আমাদের বলেছেন, অতিদ্রুত সারা দেশে একেবারে ওয়ার্ড পর্যায়ে রিলিফ কমিটি করতে। যারা সত্যিকারের দুস্থ, যারা কারও কাছে চাইতে পারে না, দরিদ্র, অতিদরিদ্র সবাইকে আওতায় এনে লিস্ট করতে বলেছেন। লিস্ট করা হলেই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।”
আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটির দেওয়া তালিকা প্রশাসন যাচাই করবে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “রিলিফ কমিটিকে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ সহযোগিতা করবে। তাদের সহযোগিতায় রিলিফ বিতরণ কার্যক্রম চলবে।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানসহ এই বিষয়ে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা ঘোষণা করেছেন, এবং আমরা আশ্বস্ত হতে চাই যে সরকার প্রধানের এই অবস্থান ত্রাণ তৎপরতার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে প্রতিফলিত হবে।
“নতুন যে দলীয় কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাদের দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা তখনই পালন করতে পারে, যখন তারা দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারবেন।”
ত্রাণ আত্মসাৎ ও চুরিতে জড়িতদের প্রায় সবারই দলীয় পরিচয় থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “এমন বাস্তবতায় নতুন করে যে ত্রাণ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা এই অনিয়মের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে কি না, সেই আশঙ্কা অমূলক নয়।”
তিনি বলেন, “ত্রাণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারি প্রশাসনকে এই কর্মকাণ্ড মনিটরিংসহ মূল ভূমিকা পালনের অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।
“দলীয় ত্রাণ কমিটির ভূমিকা যেন স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং কোনোভাবেই যেন এটা প্রশাসন যন্ত্রের ওপর দলীয় প্রভাব বিস্তার ও অনিয়মের মহোৎসব করার প্লাটফর্মে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
এক্ষেত্রে উপকারভোগীদের তালিকা, ত্রাণের পরিমাণ এবং বিতরণের তারিখ প্রকাশ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার প্রস্তাব দিয়েছে টিআইবি, যাতে যে কোনো অনিয়ম বা ঘাটতি সংবাদকর্মী ও জনগণ যাচাই করতে পারে।