বিশ্বের ১৮৯টি দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বুধবার শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে ১৪ অক্টোবর।
এবারের সম্মেলনে মোট ১৫ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এরমধ্যে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এক হাজারের বেশি।
সম্মেলনে অংশ নিতে আসা বিদেশিদের পদচারণায় মুখরিত এখন বালি দ্বীপ। কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে ইন্দানেশিয়ার ‘সাগর কন্যা’ নামে পরিচিত এই পর্যটন দ্বীপকে।
বালির নুসা দুয়া কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলন শুরু হয়ে গেলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ১২ অক্টোবর শুক্রবার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিনা লগার্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রীরা বক্তব্য রাখবেন।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের প্রতিনিদিল এখন বালিতে অবস্থান করছেন।
সম্মেলনের প্রথম দিন বুধবার বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আইএমএফর নির্বাহী পরিচালক সুবির ভিতাল গোকারানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন মুহিত।
এ দুই বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বলেন, “আজ তেমন কিছু হয়নি। আইএমএফের নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে একটা বৈঠক করেছি। কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে মূল বৈঠক শুরু হবে।”
বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বৃহস্পতিবার
অর্থমন্ত্রী মুহিত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ২টায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বৈঠকে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে প্রতিনিধিদলের এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরবেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী মুল্যায়নি ইন্দ্রাবতির সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও অংশ নেবেন মুহিত।
এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন ‘অভূতপূর্ব সাফ্যল্যের বার্তা’ নিয়ে।
এই বৈঠকের কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার ধারার চিত্র হিসেবে প্রায় ৭ দশমিক ৮৬ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ঘোষণা এসেছে। আগের দুই অর্থবছরেও ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতা দেখিয়ে চলেছে। মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখ অসহায় মানুষকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।
যে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন করতে চেয়েছিল নানা টানাপড়েনে সেই অর্থ না নিয়েই নিজস্ব অর্থে সেতুর কাজ অর্ধেকেরও বেশি শেষ করেছে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্টোরেলসহ আরও বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে।
সোমবার রাতে বালি যাওয়ার আগে মুহিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশেষ করে সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ।
“একসময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের পথে। আমরা যেমন মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই, আকাঙ্ক্ষা উন্নয়নশীল দেশ হওয়ারও। আমরা আর পেছনের দিকে তাকাতে চাই না। উন্নয়নের যে জোয়ার লেগেছে সেটা ধরে রাখতে চাই।”
আর সেটা করতে পারলেই আমাদের সেই আকাঙক্ষা পূরণ হবে। এবারের বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে আমরা আমাদের এ সব সাফল্য এবং স্বপ্নের কথাই তুলে ধরবো।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম ভাগে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের এই সভা হয়। পর পর দুটি বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থা দুটির সদর দপ্তরে হওয়ার পর তৃতীয় সভাটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সদস্যভুক্ত অন্য কোনো দেশে।