‘সাফল্য ও স্বপ্ন’ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সভায় বাংলাদেশ

বিশ্বের আর্থিক খাতের দুই মোড়ল বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভাটি প্রতিবারের মতো হলেও এবার বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2018, 11:28 AM
Updated : 9 Oct 2018, 11:33 AM

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বিশ্বের ১৮৯টি দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে শুরু হতে যাওয়া এই সভায় এবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা যাচ্ছেন ‘অভূতপূর্ব সাফ্যল্যের বার্তা’ নিয়ে।

এই বৈঠকের কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার ধারার চিত্র হিসেবে প্রায় ৭ দশমিক ৮৬ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ঘোষণা এসেছে। আগের দুই অর্থবছরেও ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতা দেখিয়ে চলেছে। মিয়ানমার থেকে  আসা ১০ লাখ অসহায় মানুষকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।

যে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন করতে চেয়েছিল নানা টানাপড়েনে সেই অর্থ না নিয়েই নিজস্ব অর্থে সেতুর কাজ অর্ধেকেরও বেশি শেষ করেছে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্টোরেলসহ আরও বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে।

সোমবার রাতে বালি যাওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশেষ করে সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ।

“একসময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’  বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের পথে। আমরা যেমন মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই, আকাঙ্ক্ষা উন্নয়নশীল দেশ হওয়ারও।

“আমরা আর পেছনের দিকে তাকাতে চাই না। উন্নয়নের যে জোয়ার লেগেছে সেটা ধরে রাখতে চাই। আর সেটা করতে পারলেই আমাদের সেই আকাঙক্ষা পূরণ হবে। এবারের বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে আমরা আমাদের এ সব সাফল্য এবং স্বপ্নের কথাই তুলে ধরবো।”

ইন্দোনেশিয়ার পর‌্যটন দ্বীপ বালিতে ৮ অক্টোবর থেকে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সভা শুরু হয়েছে। চলবে ১৪ অক্টোবর পর‌্যন্ত।

সভায় যোগ দিতে সোমবার রাতে বালির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।

বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ বৈঠক শুরুর আগে সেখানে কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও অংশ নেবেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর  ফজলে কবির, ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।

বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সবচেয়ে বড় এই সম্মেলনে এ দুই উন্নয়ন সংস্থার সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও বেসরকারি খাতের নির্বাহী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৭ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।

মঙ্গলবার বালিতে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভা চলাকালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এমাসের শুরুতে বিশ্ব ব্যাংকও চলতি অর্থবছরের জন্য প্রায় আইএমএফের কাছাকাছি- ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

তবে এই প্রক্ষেপণ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও সরকারের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্বলনের চেয়ে কম।

আইএমএফের হিসাবে, চলতি বছর শেষে বাংলাদেশে ভোক্তা মূল্য সূচক (মূল্যস্ফীতি) ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ও আগামী বছর ৬ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ব্যবসায় নীতি নিয়ে উত্তেজনা ও আমদানি শুল্ক আরোপের কারণে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে বলে আইএমএফের পূর্বাভাস বলছে।

সংস্থাটির হিসাবে, ২০১৮ ও ২-১৯ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ৩ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে জুলাইতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম ভাগে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের এই সভা হয়। পর পর দুটি বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থা দুটির সদর দপ্তরে হওয়ার পর তৃতীয় সভাটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সদস্যভূক্ত অন্য কোনো দেশে।