‘বিব্রত’ সিইসি বললেন, মানুষের প্রাণ ভোটের চেয়ে মূল্যবান

‘উৎসবের আমেজে’ একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর দ্বিতীয় দিনেই সহিংসতায় প্রাণক্ষয়ের ঘটনায় নিজের মর্মবেদনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2018, 06:39 AM
Updated : 12 Dec 2018, 11:42 AM

তিনি বলেছেন, “আমরা গতকাল অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলেছিলাম, নির্বাচন কার্যক্রমে কোনো অঘটন ঘটেনি। কিন্তু গতকালকেই ঘটনা ঘটেছে, যেটা আমাদেরকে বিব্রত করেছে, মর্মাহত করেছে।”

নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে সিইসির হুদার এ মন্তব্য আসে। 

৩০ ডিসেম্বর ভোট সামনে রেখে গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ৩০০ আসনে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচারে নেমেছেন পৌনে দুই হাজার প্রার্থী। 

প্রচারের প্রথম দিনেই নির্বাচনী উত্তাপ দেখে সন্তুষ্ট নূরুল হুদা মঙ্গলবার পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেছিলেন, উত্তাপ ছড়ালেও পরিস্থিতি যেন উত্তপ্ত না হয়।

কিন্তু মঙ্গলবার ডজনখানেক জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি-ভাংচুরের ঘটনা ঘটে, নোয়াখালী ও ফরিদপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় ক্ষমতাসীন দলের দুজন নিহত হন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থীর গাড়ি বহর হামলার মুখে পড়ে।

সিইসি বলেন, “নোয়াখালীতে একজন যুবক নিহত হয়েছে, যেটি আমাদের অত্যন্ত বিব্রত করেছে, আমাদের ব্যাথা দিয়েছে।”

আর ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলাকে ‘অনাকঙ্খিত’ ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে নূরুল হুদা বলেন, “এটা কখনও কাম্য হতে পারে না। আমরা কিন্তু বিব্রত। একটা মানুষের জীবন সমগ্র নির্বাচনের চেয়ে মূল্যবান।”

সহিংসতায় ‘বিব্রত ও ব্যথিত’ হওয়ার কথা বললেও নোয়াখালী ও ফরিদপুরে হতাহতের ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সিইসির বক্তব্যে আসেনি।

বরং তিনি সহিংসতার পথ থেকে বেরিয়ে আসতে সবাইকে পথ খুঁজে বের করার তাগিদ দেন। রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী, প্রার্থী, সমর্থক সবাইকে ধৈর্য ধরতে, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেন। নির্বাচনের বাকি দিনগুলোতে আর কোনো ‘অঘটন’ যেন না ঘটে, সেই প্রত্যাশার কথাও বলেন।

“কারও নির্বাচনী প্রচারে কেউ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবেন না। যে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি পরিহার করবেন, নিজেরাই প্রতিহত করবেন।”

ভোটের মাঠের প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসার রূপ না নেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, “অপরাধ সংঘঠনের ক্ষেত্র তৈরি যেন না হয় সে দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন।”

এবার ১৮০০ প্রার্থীর ভোটের মাঠে প্রতিযোগিতায় থাকার বিষয়টি তুলে ধরে সিইসি বিচারিক হাকিমদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের বিচারিক মনমানসিকতা এ নির্বাচনকে আরও বেশি স্থিতিশীল করবে। সে হিসেবেই আপনারা কাজ করবেন। নিরপেক্ষভাবে সকলের সাথে একই আচরণ করবেন।”

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, কবিতা খানম এবং ইটিআই মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।