দশম সংসদ নির্বাচন থেকেই প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে চলছে মতভেদ ছিল, তা না কাটার মধ্যেই বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি।
তফসিলের ৪৫ দিন পর আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন রাখা হয়েছে; প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপিসহ তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা। এবারও সেই দাবি তাদের রয়েছে।
তবে এবার তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে, ইভিএম বাদ দিয়ে, ইসি পুনর্গঠন করে, সংসদ ভেঙে দিয়ে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি নিয়ে সংলাপে যায় ঐক্যফ্রন্ট। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই দফা সংলাপে সমঝোতা না হওয়ার পর আরও আলোচনা আশা রেখে তফসিল পেছানোর আহ্বান ছিল ঐক্যফ্রন্টের।
কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণ দেখিয়ে তফসিল ঘোষণা করে দেয় ইসি। সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।
তফসিল ঘোষণার ভাষণে সিইসি বলেন, “নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণ করার জন্য আবারো আহ্বান জানাই। তাদের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে মতানৈক্য বা মতবিরোধ থেকে থাকলে রাজনৈতিকভাবে তা মীমাংসার অনুরোধ জানাই।”
প্রত্যেক দল যেন একে অন্যের প্রতি সহনশীল, সম্মানজনক এবং রাজনীতিসুলভ আচরণ করে, সেই অনুরোধও জানান নূরুল হুদা।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তফসিল ঘোষণা পেছানোর উপায় ছিল না বললেও নূরুল হুদা ইতোপূর্বে বলেছিলেন, সব দল চাইলে সংবিধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে থেকে কমিশন ভোটগ্রহণের সময়সূচি কয়েকদিন পেছানোর কথা ভাবতে পারে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে প্রার্থীর সমর্থকদের সরব উপস্থিতিতে অনিয়ম প্রতিহত হয় বলে আমি বিশ্বাস করি।”
সহিংসতা ও বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এবার ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন প্রতিহিংসায় না যায়, তার দিকে নজর রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন নূরুল হুদা।
“প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন কখনও প্রতিহিংসা বা সহিংসতায় পরিণত না হয়, রাজনৈতিক দলকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাই।”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলছে, বর্তমান সংসদ ও সরকার বহাল থাকলে নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না।
তাদের আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, “সবার জন্য অভিন্ন আচরণ ও সমান সুযোগ সৃষ্টির অনুকূলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হবে। এসব বিষয়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে।”
গ্রেপ্তার-হয়রানি নিয়ে সরকারবিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও হুঁশিয়ার করেন।
“ভোটার, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রার্থীর সমর্থক এবং এজেন্ট যেন বিনা কারণে হয়রানির শিকার না হন বা মামলা-মোকদ্দমার সম্মুখীন না হন, তার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর কঠোর নির্দেশ থাকবে।”
ভোটারদের আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, “দলমত নির্বিশেষে সকল সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ধর্ম, জাত, বর্ণ ও নারী-পুরুষভেদে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ভোট শেষে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে অবস্থান করতে পারবেন।”
রাজনীতিতে উত্তাপ, মানুষের আগ্রহের কারণ দেশে এখন ভোটের হাওয়া বইছে বলে মনে করেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা নূরুল হুদা।
তিনি বলেন, “দেশের প্রখ্যাত নেতৃবৃন্দ দলগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে মিলিত হয়েছেন। সভা-সমাবেশ নির্বাচনী বক্তব্যে উত্তপ্ত হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বহুসংখ্যক সংগঠন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশব্যাপী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে।”
এই অবস্থায় তফসিল ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে দেশবাসী সবার সহযোগিতা চেয়েছেন নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির প্রধান নূরুল হুদা।
“জাতির আকুল আগ্রহের এ জায়গায় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সফল হব,” তার আশাবাদী কণ্ঠ।