অপেক্ষার ‘সময় নেই’ ইসির

সংলাপে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে মতভেদ না কাটলেও তাদের সমঝোতার জন্য আর অপেক্ষা করতে চাইছে না নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2018, 05:40 PM
Updated : 7 Nov 2018, 05:41 PM

তাই বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্তই থাকছে বলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপও ব্যর্থ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সংবাদ সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা আসার মধ্যেই একথা জানান তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করবেন কি না- জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, “আমাদের অপেক্ষা করার কিছুই নেই। আমরা সবার সঙ্গে বসেছি, মতামতও পেয়েছি। এখন তফসিল ঘোষণা করা হবে।”

হেলালুদ্দীন আহমদ (ফাইল ছবি)

আলোচনার আহ্বান বারবার নাকচ করে আসা শেখ হাসিনা অনেকটা আকস্মিকভাবেই বিএনপিকে নিয়ে গঠিত কামাল হোসেনের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসেন।

এরপর অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংলাপে ডাকেন তিনি। প্রথম দফায় সংলাপে মতৈক্য না হওয়ার পর বুধবার দ্বিতীয় দফায় সংলাপেও সমঝোতা হয়নি। 

প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের ফলাফলের দিকে তাকাবেন কি না- এই প্রশ্নে হেলালুদ্দীন বলেন, “ফলাফল জেনে গেছি। আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। উনারাও তফসিল ঘোষণায় সমর্থন জানিয়েছেন এবং সাংবিধানিকভাবে তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার ইসির।”

গত ১ নভেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ চলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সব রাজনৈতিক দল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে। বুধবার সর্বশেষ বৈঠক হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে।

ইসি সচিব বলেন, অধিকাংশ দল-জোটই বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণায় সমর্থন দিয়েছে।

“সবার বক্তব্য আমরা শুনেছি। সব কিছু পর্যালোচনা করে তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এখন তফসিল ঘোষণার শতভাগ প্রস্তুতি আমাদের।”

আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে ইসি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠকে ইসি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তফসিল পেছানোর আহ্বান জানালেও তা উপেক্ষা করেই বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে নির্বাচনের সময়সূচি জানানোর সিদ্ধান্ত নেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।

হেলালুদ্দীন বলেন, “সব দিক বিবেচনা করে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করবে।

“এজন্য বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০টায় কমিশন বসবে; সেখানে তফসিলের বিস্তারিত সময়সূচি চূড়ান্ত করা হবে। তা পরবর্তীতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।”

নির্বাচন কমিশনে সিইসির রেকর্ড করা ভাষণ সন্ধ্যায় যথাসময়ে প্রচারের ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তা তুলে ধরে সিইসি নূরুল হুদা গত মঙ্গলবার বলেছিলেন, “তার বাইরে তো আমরা যেতে পারব না।… তফসিল পেছানোর কোনো উপায় নেই। আমরা তফসিল পেছাব না।”

অবশ্য সব দল চাইলে সংবিধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে থেকে কমিশন ভোটের সময়সূচি কয়েকদিন পেছানোর কথা ভাবতে পারে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

সিইসি কে এম নূরুল হুদা (ফাইল ছবি)

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ইতোপূর্বে বলেছিলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলে ৪৫ দিন সময়কে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মেনে ভোটের সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। যে ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন, তাতে ভোট হতে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে।

সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবিতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল, সেই প্রশ্নে মীমাংসা ছাড়াই একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল দিতে যাচ্ছে ইসি।  

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবিতে সমঝোতায় কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে বিএনপিকে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলেছে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কথা।

ফলে আশা জাগিয়ে সংলাপ শুরুর পরও তাতে কোনো ফল এল না।