মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গ্রামে হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে সেনাবাহিনীর গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছে দেশটির সরকার।
Published : 14 Nov 2016, 10:22 AM
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সেনাদের ওপর চালানো এক চোরাগোপ্তা হামলায় দুই সেনা ও ছয় হামলাকারী নিহত হন। এর জের ধরে হেলিকপ্টার গানশিপ তলব করা হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে গ্রামগুলো পুড়ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশ করা ছবিতে পুড়ে যাওয়া গ্রামের ঘরবাড়ি দেখা গেছে। ওইসব এলাকার ৪৩০টি পাকা ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
লড়াই চলছে ও বেসামরিক লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে, গত মাসে এমন খবরের ভিত্তিতে ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ছবিগুলো তোলা হয়।
রোহিঙ্গা অধিকার নিয়ে আন্দোলনরতরা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সরকার পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু মুসলিমদের তাদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক বাহিনীর আক্রমণ একটি জনপ্রিয় পদক্ষেপ বলে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে জানিয়েছেন বিবিসি প্রতিনিধি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে মনে করে অনেক মিয়ানমারবাসী এবং তাদের অপছন্দ করে, তবে সবাই তা করে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
এক মাস আগে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন তিনটি পুলিশি তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালানোর পর সর্বশেষ এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
স্বাধীন সাংবাদিকদের রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেয় না মিয়ানমার সরকার, তাই দাবি অনুযায়ী সেখানে লড়াইয়ের তীব্রতা নির্ধারণ করা অসম্ভব।
শনিবার দেওয়া সর্বশেষ সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেনাদের লক্ষ্য করে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয়েছে এবং সশস্ত্র ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বন্দুক, ছুরি ও বল্লমে সজ্জিত এসব সশস্ত্র ব্যক্তিদের রোহিঙ্গা মুসলিম বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক পর্যায়ে ৫০০ জনের মতো সশস্ত্র ব্যক্তির হামলার মুখে পড়ে সেনারা আকাশ পথে সহায়তা চেয়ে পাঠায়। এর পরপরই সেখানে দুটি হেলিকপ্টার গানশিপ পাঠানো হয় এবং তারা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে গুলিবর্ষণ করে।
এতে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিবিসি প্রতিনিধি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ার পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেছেন, “নতুন ছবিগুলো দেখিয়েছে প্রথমে আমরা যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে।”
ঘটনার শিকারদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মিয়ানমার সরকারের উচিত দ্রুত জাতিসংঘ-নির্দেশিত একটি তদন্ত শুরু করা বলে জানিয়েছেন অ্যাডামস।
অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, হামলাকারীদের ধরতে তল্লাশি অভিযানের অংশ হিসেবে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালানো হচ্ছে।