বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ঘটনায় তোপের মুখে থাকা গভর্নর আতিউর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বললে তিনি পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছেন।
Published : 15 Mar 2016, 09:51 AM
তিনি বলেছেন,“আমি অপেক্ষা করছি, প্রধানমন্ত্রী কী বলেন। আমি পদত্যাগ করলে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো হয়, দেশের ভালো হয়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার দ্বিধা নাই। আমি পদত্যাগপত্র লিখে বসে আছি। প্রধানমন্ত্রী বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি পদত্যাগ করব।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ লোপাটের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে চেপে রাখায় ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের ইংগিত দেওয়ার পরদিন গভর্নরের এই বক্তব্য এলো।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। তার আগেই সকালে গুলশানে নিজের বাসায় কয়েকজন সাংবাদিকের সামনে আসেন গভর্নর আতিউর। এরপর তিনি রওনা হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পথে।
গভর্নর জানান, সোমবার ভারত থেকে দেশে ফেরার পর রাতেই অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
“তিনি বলেছেন, আমি চলে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো চলবে। কিন্তু আমি আমার বিবেক দ্বারা চালিত হই। মনে করি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন, তিনি না বললে আমার পদত্যাগ করা উচিৎ নয়।
“আমি প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় আছি। আমি সাত বছর দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংককে সন্তানের মতো মনে করেছি। রিজার্ভের ২৮ বিলিয়ন ডলার থেকে অর্থ চুরি হোক- এটা আমি কখনও চাইনি।”
ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারারে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার লোপাটের খবর এলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে।
তদন্তে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই অর্থ ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়।
শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে আরও ২০ মিলিয়ন ডলার সরানো হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতেই বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী মুহিতকে এক মাস পর তা পত্রিকা পড়ে জানতে হয়।
যাকে বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থ হ্যাকিংয়ের ঘটনা বলা হচ্ছে, সেই খবর সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে জানাতে কেন এক মাস দেরি করলেন- তারও একটি ব্যাখ্যা হাজির করেছেন গত কয়েক বছরে নানা পুরস্কারজয়ী গভর্নর আতিউর।
“এ কথা ঠিক যে দেশের স্বার্থে অর্থ চুরি যাওয়ার বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে একটু পরে জানিয়েছিলাম। তবে দেশের স্বার্থেই সেটা আমি করেছি। কারণ সঙ্গে সঙ্গে জানাজানি হয়ে গেলে আরও সাইবার অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা ছিল।”
এই কেলেঙ্কারির মধ্যে বিদেশে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “ভারতে আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা ছিল, যেখানে সংস্থাটির এমডি ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সভার গুরুত্ব বিবেচনা করেই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আর এখন ডিজিটাল যুগ- সব সময়ই আমি অনলাইনে খবর রেখেছি, কাজ করেছি।
“প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম।”
এদিকে অর্থ চুরি এবং তার তদন্ত নিয়ে অর্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন ডাকার পর সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিচালনা পর্ষদের মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশেষ কারণে পরিচালনা পর্ষদের সভা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সভার তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি।”
রিজার্ভ চুরি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমানকে সদস্য নিয়োগ দেয় সরকার।
এ সম্পর্কিত খবর-