ব্যাংক খাতে ‘পরিবর্তন’ আসছে: অর্থমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ঘটনায় ব্যাংকিং খাতে ‘পরিবর্তন’ আসছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2016, 09:17 AM
Updated : 15 March 2016, 01:40 PM

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর পুরো বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করবেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, যা বলার সেখানেই বলবেন তিনি।

এদিকে এই কেলেঙ্কারির মধ্যে আইএমএফের এক বৈঠকে অংশ নিয়ে ভারত থেকে ফিরে গভর্নর আতিউর রহমান এড়িয়ে গেছেন সাংবাদিকদের।

ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারারে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার লোপাটের খবর এলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে।

তদন্তে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই অর্থ ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়।

শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে আরও ২০ মিলিয়ন ডলার সরানো হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। 

বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতেই বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী মুহিতকে এক মাস পর তা পত্রিকা পড়ে জানতে হয়। 

অর্থ লোপাটের বিষয়টি চেপে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাকে ‘অযোগ্যতা’ আখ্যায়িত করে ‘ক্ষুব্ধ’ মুহিত রোববার বলেছিলেন, এই ‘স্পর্ধার’ জন্য ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেবেন বলেও জানিয়েছিলেন মুহিত।

আবুল মাল আবদুল মুহিত

সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে ফিরলে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান।

উত্তরে তিনি বলেন, “ডেফিনেটলি দেয়ার উড বি চেইঞ্জেস। এতো বড় একটা সিরিয়াস ব্যাপার। আই টেক ইট ভেরি সিরিয়াসলি।”

সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতেই মুহিত অর্থ লোপাটের ঘটনা নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন জানিয়ে বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলাপের সময় অর্থমন্ত্রীকে বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল।”

প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে মুহিত নিজের মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আই অ্যাম ওয়েটিং ফর আতিউর। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব বলেছিলাম, আলোচনা আমার হয়েছে।”

এখন বিবৃতি দেবেন কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আর কিছু স্টেটমেন্ট নাই। গভর্নর ফিরে আসলে আই উইল... স্টেটমেন্ট। সেটা আজও হতে পারে, কালও হতে পারে। কারণ সে কখন আসবে-তার কোনো ঠিক নাই।”

দুপুরে অর্থমন্ত্রী একথা বলার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “ যে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বিরাট বিরাট প্রকল্প করছেন, রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ, জিডিপি ৭ শতাংশ হবে বলে মনে করছি... সেই  মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘটনা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

“এটা আমরা কল্পনা করি নাই, আমরা চিন্তা করি নাই, এ ব্যাপারে অবশ্যই বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করব। ব্যাপারটা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী- আমরা সকলেই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি।”

দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর মুহিত তার কার্যালয়েই ছিলেন। গভর্নর আতিউর বিকালে  ঢাকায় ফেরার পর সচিবালয়ে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও গুঞ্জন ছড়ায়। তবে সচিবালয়ে যাননি তিনি।

বিমানবন্দরে কয়েকজন সাংবাদিক কথা বলার চেষ্টা করলেও আতিউর কোনো কথা বলেননি।

আতিউর রহমান

গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “স্যার (আতিউর) আজ গণমাধ্যমের সাথে কোনো কথা বলবেন না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গভর্নরের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর কথা হয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।”

এর মাঝেই সন্ধ্যায় পরদিন অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা আসে। মন্ত্রী তখনও তার কার্যালয়েই ছিলেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম, অতিরিক্ত সচিব গোকুল চাঁদ দাশের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি।

ওই আলোচনা চলার মধ্যে অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব এস এম জাকারিয়া হক সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলনটি হবে।

রাতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মুহিত প্রায় সারাদিন ধরে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে আবার পড়েন।

তখন তিনি বলেন, “আপনাদের (সাংবাদিকদের) এই সার্ভিলেন্স যদি বাংলাদেশে ব্যাংকে হত, তাহলে ভালো হত। দেশের টাকা বেঁচে যেত।”

সাংবাদিকরা আরও প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে “যা বলার কাল সংবাদ সম্মেলনেই বলব, এখন কিছুই বলব না” বলেই বেরিয়ে যান।

এদিকে অর্থ চুরি এবং তার তদন্ত নিয়ে অর্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন ডাকার পর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিচালনা পর্ষদের মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশেষ কারণে পরিচালনা পর্ষদের সভা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সভার তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি।”

রিজার্ভ চুরি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমানকে সদস্য নিয়োগ দেয় সরকার।