আতিউরকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন নুহ-উল-আলম লেনিনের

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদেশের অর্থ লোপাটের ঘটনায় গভর্নর আতিউর রহমানকে অপসারণের যে দাবি বিএনপি তুলেছে, তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2016, 05:31 AM
Updated : 14 March 2016, 07:17 PM

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, “টাকা চুরি যাওয়া এবং তথ্য গোপন করে দায়িত্বহীন আচরণের জন্য অবিলম্বে আতিউরকে গভর্নরের পদ থেকে অপসারণ করা উচিত।”

তিনি পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন এবং গভর্নর আতিউরকে ‘ড. মুহম্মদ ইউনূসের চেলা’ আখ্যায়িত করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলেছেন। 

সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে লেনিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাবেক এই বাম নেতা বলেন, ওই ‘স্ট্যাটাস’ তারই লেখা।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়। ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারার ২৯ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টি দুটি দেশেই আলোচনায় আসে।  

ব্যাংকের টাকা চুরির যেসব ঘটনা এ পর্যন্ত বিশ্বে ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে ‘অন্যতম বড়’ বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরুতেই অর্থ চুরির বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি জানতে হয় প্রায় এক মাস পর, পত্রিকা পড়ে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে বিষয়টি সামাল দিতে চেয়েছে তাকে ‘অযোগ্যতা’ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। অর্থ লোপাটের বিষয়টি চেপে রাখার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুহিত বলেছেন, এই ‘স্পর্ধার’ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

বিএনপির পক্ষ থেকে গভর্নরের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করে দুজনের পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে।

দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুদিন আগে বলেছেন, গভর্নরকে অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।

গভর্নরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুহ-উল-আলম লেনিনও।

তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির নৈতিক দায় গভর্নর আতিউর রহমান এড়াতে পারেন না। পরম আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় একটা কেলেঙ্কারির বিষয় মাসাধিক কাল আগে জানা সত্ত্বেও আতিউর এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রী ও ব্যাংকিং বিভাগের সচিবকে জানাননি কেন?”

অর্থ চুরির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেপে রাখায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম রোববার সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার পর দুই বার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা হলেও সেখানে বিষয়টি গোপন করা হয়েছে।

সচিবের ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে লেনিন প্রশ্ন তুলেছেন- বিষয়টি চেপে যাওয়ার এই চেষ্টা ‘কার স্বার্থ রক্ষার জন্য’?

“এত বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা জানা সত্ত্বেও আতিউর কীভাবে নির্লিপ্ত থেকে দিল্লি ভ্রমণ করতে পারেন? কেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না?”

সভাপতিমণ্ডলীতে আসার আগে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা নুহ-উল-আলম লেনিন চলতি বছর গভর্নর আতিউর রহমানের বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

“আতিউর ব্যাংকের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক সংগ্রহের জন্য গভর্নর পদের অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বেসরকারি ব্যাংকের অর্থ ব্যয় করেছেন।”

তদন্ত করে এর সত্যতা প্রমাণিত হলে আতিউরের ‘উপযুক্ত শাস্তি’ দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “কী এমন সৃজনশীল প্রবন্ধ রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে আতিউর সমৃদ্ধ করলেন যার জন্য এ বছর তাকে ‘সামগ্রিক প্রবন্ধের জন্য’ বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হল? এর পেছনেও নাকি অবৈধ প্রভাব কাজ করেছে?

“ফলে লেখালেখি করেন এমন ক্ষমতাবান আমলারাও বাংলা একাডেমিকে তাদের একাধিক বই প্রকাশ/ অনুবাদ এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদানে বাধ্য করেন। অধস্তন কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে আতিউর ও বড় আমলা গংরা পুরস্কার/পদক এবং নাম কেনার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, অবিলম্বে তা বন্ধ না করলে জাতির কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।”

নিজের পোস্টের শেষে লেনিন লিখেছেন, দলীয় অবস্থান থেকে নয়, একজন ‘সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক’ হিসেবে নিজের এই অভিমত।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই বছর ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব নেন উন্নয়ন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আতিউর রহমান।

এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে সরকার তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।

সে অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ২ অগাস্ট, অর্থাৎ অবসর সীমার ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তার গভর্নর থাকার কথা।