কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘স্পর্ধায়’ ক্ষুব্ধ মুহিত ‘ব্যবস্থা’ নেবেন

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদের টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে লোপাট হওয়ার বিষয়টি সরকারকে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাতে দারুণ ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2016, 09:15 AM
Updated : 15 March 2016, 01:41 PM

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে তিনি একটি বিবৃতি দেবেন।

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘অদক্ষতা’ নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা জানান।  

“আই অ্যাম ভেরি আনহ্যাপি অ্যাবাউট হ্যান্ডলিং অব দ্য ম্যাটার বাই বাংলাদেশ ব্যাংক, ভেরি ইনকম্পিটেন্ট।”

গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়। ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারার ২৯ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন  প্রকাশ করলে আলোচনার ঝড় ওঠে।

ব্যাংকের টাকা চুরির যেসব ঘটনা এ পর্যন্ত বিশ্বে ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে ‘অন্যতম বড়’ বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরুতেই অর্থ চুরির বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি জানতে হয় প্রায় এক মাস পর, পত্রিকা পড়ে।  

স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রুষ্ট মুহিত ইংরেজিতে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাড দ্য অডাসিটি নট টু ইনফর্ম মি। আই অ্যাম সার্টেনলি গোয়িং টু টেইক অ্যাকশন্স অন দিস অডাসিটি অব বাংলাদেশ….।”

অবশ্য কী ব্যবস্থা তিনি নেবেন, তা সাংবাদিকদের বলেননি সরকারি কোষাগারের এই অভিভাবক। 

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোববারই তার একটি সভা রয়েছে। সেই সভার পর সন্ধ্যায় বা সোমবার সকালে বিবৃতি দিয়ে তিনি এ ব্যাপারে জানাবেন।

বিবৃতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কী সম্পর্ক- তা জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “বিকজ আই ওয়ান্ট টু ডু সামথিং। আই মাস্ট হ্যাভ হার…।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এই চুরির ঘটনায় অর্থমন্ত্রী এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে মামলার কথা বললেও রোববার সেই অবস্থান থেকে অনেকটা সরে আসেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ইট অ্যাপিয়ার্স আমাদের সাইবার প্রটেকশন প্রোগ্রাম হ্যাজ ফ্লজ। ইট অ্যাপিয়ার্স, আই কান্ট সে ডেফিনেটলি। কারণ ফেডারেল রিজার্ভতো বলছে, তাদের কোন.. দেয়ার ওয়াজ নাথিং ফ্লজ উইথ..। এটা একটু দেখতে হবে।”

এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে।

তারা বলছে, সাইবার আক্রমণে ৩৫টি ভুয়া পরিশোধ নির্দেশে ৯৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে ৩০টি নির্দেশের ৮৫ কোটি ডলার বেহাত হওয়া শুরুতেই প্রতিহত করা গেছে। অবশিষ্ট ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দুই কোটি ডলার এরই মধ্যে ফেরত আনা গেছে।

“বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৬৩৫ কোটি টাকা) ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”

অর্থ চুরির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেপে রাখায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল ঘটনাটি পরিচালনা পর্ষদ ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো।

চলতি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দুটি সভায়ও বিষয়টি তোলা হয়নি বলে জানান সচিব, যিনি নিজেও ওই  পর্যদের একজন সদস্য।

তিনি বলেন, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আট কোটি ডলারের বেশি হাতিয়ে নেওয়ার এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি ব্যবস্থাপনার ‘দুর্বলতা ও ত্রুটি’ বেরিয়ে এসেছে।

এ নিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে বলেও জানান তিনি।