বছর চারেক বিরতিতে আরেকটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলে এসেছে প্রায়। অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডে একাদশ বিশ্বকাপের খেলা মাঠে গড়ানোর আগে ফিরে দেখা যাক আগের ১০ আসর। ১৯৯২ সালে বর্তমানের স্বাগতিক দুই দেশে যৌথ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দেখায় ক্রিকেটীয়-রূপকথা।
Published : 04 Feb 2015, 07:02 PM
২০১১: বাংলাদেশেও বিশ্বকাপ, শিরোপা ভারতের
২০০৭: অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক শিরোপা, বাংলাদেশের সেরা সাফল্য
২০০৩: অস্ট্রেলিয়ার টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা
১৯৯৯: অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপের জয়ের সূচনা
১৯৯৬: শ্রীলঙ্কার আভিজাত্যে উত্তরণের কাহিনী
১৯৮৭: উপমহাদেশে প্রথম বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্যের সূচনা
১৯৮৩: অঘটনের তৃতীয় বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারত
রক্ষণশীলতার খোলসে নিজেদের বন্দী করে রাখে তারা অনেকদিন। কিন্তু অন্ধ হলেই কী আর প্রলয় বন্ধ থাকে? ক্যারি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট বিশ্বে যে প্রলয়নাচন তুলেছিল, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কত দিন আর সেটি উপেক্ষা করবে!
অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডে ১৯৯২ বিশ্বকাপ হাঁটে তাই ওই ক্যারি প্যাকারের দেখানো পথে। ক্রিকেটারদের গায়ে ওঠে রঙিন পোশাক। লাল বল রঙ বদলে হয় সাদা, সাদা সাইটস্ক্রিন কালো। ‘বিগ বয়েজ প্লে অ্যাট নাইট’ -প্যাকার সিরিজে ইমরান খানের টি-শার্টের এই চটকদার লেখার প্রতিফলনে ফ্লাডলাইটের রূপালি আলোয় আয়োজন করা হয় ৩৯ ম্যাচের বেশিরভাগ। সব মিলিয়ে এক যুগ আগে যে ক্রিকেট-বিপ্লবের অনানুষ্ঠানিক সূচনা, ১৯৯২-এর বিশ্বকাপে এসে তা যেন পায় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।
পরিবর্তনের হাওয়ায় সেবার যুক্ত হয় আরো অনেক নতুনত্ব। প্রথম ১৫ ওভারের ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতা ওয়ানডের আমেজ দেয় বদলে। ওই সময়ে দুজন মাত্র ফিল্ডার থাকতে পারত ৩০ গজের বাইরে।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন তারা, খেলাও হচ্ছে হাতের তালুর মতো চেনা উইকেট-কন্ডিশনে; ১৯৯২ বিশ্বকাপের আবহে তাই সংশয়াতীত ফেভারিট ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই যে হেরে বসে তারা নিউ জিল্যান্ডের কাছে! অধিনায়ক মার্টিন ক্রোর অনবদ্য শতক তৈরি করে সেই অঘটনের প্রেক্ষাপট। সবাইকে চমকে দিয়ে একের পর এক ‘দৈত্য’ বধ করতে থাকে কিউইরা। এক শতক, চার অর্ধশতকে টুর্নামেন্ট-সর্বোচ্চ ৪৫৬ রান করা ক্রো তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। আর প্রথম ১৫ ওভারের ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতার সুবিধা নেওয়ার জন্য মিডল অর্ডার থেকে মার্ক গ্রেটব্যাচকে ওপেনার বানিয়ে দেওয়া, অফ স্পিনার দীপক প্যাটেলকে দিয়ে বোলিংয়ের সূচনা- এমনসব বৈপ্লবিক পরিবর্তনও এসেছে কিউই অধিনায়কের কাছ থেকে। সেই পরিবর্তনের সুফলে টানা সাত ম্যাচ জিতে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে থেকে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করে নিউ জিল্যান্ড।
আট ম্যাচের মধ্যে পাঁচ জয়, দুই হার এবং এক পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে সাকুল্যে ১১ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ডের অবস্থান টেবিলের দ্বিতীয়তে। অবশ্য জিম্বাবুয়ের কাছে ম্যাচটি ৯ রানে হেরে যায় তারা। পরবর্তীতে এই ম্যাচের ফল জিম্বাবুয়ের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছিল।
১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমি-ফাইনালের তৃতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই দশকের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা দলটি নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই চমকে দেয় সবাইকে। দুর্দান্ত ফিল্ডিং, দারুণ পেস বোলিং আর ব্যাটিং গভীরতা- সর্বোপরি ক্রিকেট বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেও দারুণ পেশাদারীত্বের পরিচয় দেয় প্রোটিয়ারা।
আর অন্যতম সেরা চমক পাকিস্তানের সেমি-ফাইনালে ওঠা। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বিধ্বস্ত হয় তারা ১০ উইকেটের ব্যবধানে। প্রথম পাঁচ ম্যাচের মধ্যে হারে তিনটিতে, হারতে পারত আসলে চার ম্যাচে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৭৪ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পরও বৃষ্টি বাঁচিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। পরিত্যক্ত ওই ম্যাচ থেকে পাওয়া এক পয়েন্ট পরবর্তীতে প্রমাণিত মহাগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে। লিগ পর্বের শেষ তিন ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও তখনো পর্যন্ত অপরাজেয় নিউ জিল্যান্ডকে হারায় ইমরান খানের দল। শেষ চার নিশ্চিত হচ্ছিল না তবু। নিজেদের শেষ খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারাত, তাহলে ক্যারিবিয়ানরাই উঠত সেমি-ফাইনালে। কিন্তু ওই ম্যাচে ৫৭ রানে জিতে যায় অসিরা। তাতে ওই দুই দলের চেয়ে এক পয়েন্ট এগিয়ে থেকে সেমিতে ওঠে পাকিস্তান।
আরেক সেমিতে পাকিস্তানের নিয়তি এঁকে দিয়েছে তরুণ ইনজামামের ব্যাট। সাত উইকেটে ২৬২ রান করে এক রকম নিশ্চিন্ত ছিল নিউজিল্যান্ড। ১৪০ রানের মধ্যে প্রতিপক্ষের চার উইকেট তুলে জয়ই দেখছিল স্বাগতিকরা। তবে শেষ দিকে ইনজামামের ৩৭ বলে ৬০ রানের সাইক্লোন-ইনিংস অবিশ্বাস্যভাবে চার উইকেটে জিতিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। বিশ্বকাপে চতুর্থ সেমি-ফাইনালে এসে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকেট পায় তারা।
ইংল্যান্ডের সেটি তৃতীয় ফাইনাল। আত্মবিশ্বাসে টগবগিয়ে ফোটার কারণ অবশ্য অন্যত্র। গ্রুপ পর্বে এই পাকিস্তানকেই তো মাত্র ৭৪ রানে অলআউট করে দিয়েছিল তারা! প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফিটা জিতে নেওয়ার আশা করতেই পারে ইংলিশরা।
ফাইনালে পাকিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে ২৫ রানের মধ্যেই তুলে নেন ডেরেক প্রিঙ্গেল। দুই অভিজ্ঞতম ক্রিকেটার ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ এরপর পাকিস্তানের ইনিংসকে দেন স্থিতি। রানের পেছনে না ছুটে উইকেট আগলে রাখেন শুরুতে। কাজ হয় তাতে। ইমরানের ৭২ ও মিয়াঁদাদের ৫৮ রানের পর শেষ দিকে ইনজামাম (৩৫ বলে ৪২) ও ওয়াসিম আকরামের (১৮ বলে ৩৩) ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ছয় উইকেটে ২৪৯ রানে ইনিংস শেষ করে পাকিস্তান।
টুর্নামেন্টের প্রথম পাঁচ ম্যাচে এক জয় পেয়েছিল যে পাকিস্তান, তারাই কিনা শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন! ক্রিকেটীয়-রূপকথা আর কাকে বলে!
সবচেয়ে বেশি রান:
খেলোয়াড় (দেশ) | ম্যাচ | রান | সেরা | গড় | ১০০/৫০ |
মার্টিন ক্রো (নিউজিল্যান্ড) | ৯ | ৪৫৬ | ১০০* | ১১৪.০০ | ১/৪ |
জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান) | ৯ | ৪৩৭ | ৮৯ | ৬২.৪২ | ০/৫ |
পিটার কারস্টেন (দ.আফ্রিকা) | ৮ | ৪১০ | ৯০ | ৬৮.৩৩ | ০/৪ |
ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া) | ৮ | ৩৬৮ | ১০০ | ৫২.৫৭ | ২/০ |
রমিজ রাজা (পাকিস্তান) | ৮ | ৩৪৯ | ১১৯* | ৫৮.১৬ | ২/০ |
সবচেয়ে বেশি উইকেট:
খেলোয়াড় (দেশ) | ম্যাচ | উইকেট | সেরা | গড় | ইকোনমি রেট |
ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান) | ১০ | ১৮ | ৪/৩২ | ১৮.৭৭ | ৩.৭৬ |
ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড) | ১০ | ১৬ | ৪/৩১ | ১৯.১২ | ৩.৪৩ |
মুশতাক আহমেদ (পাকিস্তান) | ৯ | ১৬ | ৩/৪১ | ১৯.৪৩ | ৩.৯৮ |
ক্রিস হ্যারিস (নিউজিল্যান্ড) | ৯ | ১৬ | ৩/১৫ | ২১.৩৭ | ৪.৭৩ |
এডো ব্র্যান্ডেজ (জিম্বাবুয়ে) | ৮ | ১৪ | ৪/২১ | ২৫.৩৫ | ৫.০৫ |