নিষিদ্ধ হওয়ার পর মাঝে-মধ্যে মিছিলের চেষ্টার পাশাপাশি প্রকাশনায়ও সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে হিযবুত তাহরীরকে; যদিও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তাদের অভিযানের মুখে সংগঠনটির তৎপরতা নামমাত্র।
Published : 06 Dec 2014, 06:42 PM
জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে পাঁচ বছর আগে নিষিদ্ধ হয় হিযবুত তাহরীর। এরপর সংগঠনটির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এর মধ্যেও বিভিন্ন স্থানে মিছিলের চেষ্টা চালাতে দেখা যায় সংগঠনটির কর্মীদের।
মাঝে-মধ্যে সংগঠনটির পোস্টারও চোখে পড়ে রাজধানীসহ দেশের নানা এলাকায়, এর পাশাপাশি অত্যন্ত গোপনে সংগঠনটি তাদের প্রকাশনা বের করা অব্যাহত রেখেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিযবুত তাহরীরের সর্বশেষ প্রকাশনাটি ছাপানো হয়েছে পুরোনো ঢাকার ছোট এবং সহজে চোখে পড়ে না এমন একটি ছাপাখানায়।
ওই ছাপার কাজের যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ রাখেনি কোনো পক্ষই। তারা মৌখিকভাবে লেনদেন করায় কোনো ক্যাশ মেমো কিংবা এই জাতীয় কোনো কাগজপত্র ব্যবহার করেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৫ নভেম্বরে ওই কারখানার মালিকের সঙ্গে ১০ হাজার কপি ছাপানোর ব্যাপারে মৌখিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হয় হিযবুত তাহরীর। টানা তিন দিন পর্যন্ত চলে ওই সাময়িকী ছাপানোর কাজ। ১ ডিসেম্বর সমস্ত কপি ছাপাখানা নিয়ে যায় হিযবুতকর্মীরা।
ছাপাখানার কয়েকজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলত ছাপাখানার কাজ এবং সবসময় ছাপাখানার ভেতরে হিযবুত তাহরীরের ২/৩ জন থাকতেন, তারা প্রিন্টিং এবং প্যাকেজিংয়ের দিকে সর্বক্ষণ নজর রাখতেন।
‘তাহরীর ম্যাগাজিন’র ওই সংখ্যায় গণতন্ত্রকে এক ‘কুফর শাসন ব্যবস্থা’ এবং ক্ষমতাসীন সরকারকে ‘যালিম’ উল্লেখ করে দেশকে ‘মুক্ত’ করতে সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
“কারণ একমাত্র তাদের হাতেই রয়েছে সেই সামরিক সক্ষমতা, যা দ্বারা এই যালিম সরকারকে অপসারণ করা সম্ভব। সুতরাং তাদেরকে অবশ্যই হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে এবং খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহরীরের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।”
সাময়িকীটিতে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বার দেওয়া থাকলেও তাতে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
হিযুবতের এই তৎপরতার বিষয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচলক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংগঠনটি নিষিদ্ধ। এরপরও তারা গোপনে কাজ করছে বলে তথ্য রয়েছে। তবে র্যাব-পুলিশের তৎপরতার কারণে তারা অত্যন্ত গোপনে কাজ করার চেষ্টা করছে।”
জঙ্গিদের সমূলে উৎখাত করতে র্যাব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, হিযবুত তাহরীরের অনেক নেতা- সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের যে কোনো কর্মকাণ্ডের খবর জানলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে সবার প্রতি অনুরোধ রেখেছেন র্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল।
আন্তর্জাতিক ইসলামী সংগঠন হিসেবে পরিচিত হিযবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠা ১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতার নাম তকিউদ্দিন আল নাভানী।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণকারী এই সংগঠনটি ইসলামী খিলাফত কায়েমে বিশ্বাসী। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে এই সংগঠনের কাজ রয়েছে।
বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের কাজ শুরু হয় ২০০০ সালের কিছু পরে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
তবে হিযবুতের প্রচার কার্যক্রম বলছে, নিষিদ্ধ হওয়ার ৫ বছর পরও দলীয় কার্যক্রম গোপনে হলেও ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।